পবিত্র আশুরা: এমন দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল

আশুরার দিন নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ দিন। এ দিনটি আমাদের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র আশুরা। এটি মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের একটি দিন। বিশ্ব ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই দিনে সংঘটিত হয়েছে। সেগুলো যুগে যুগে মুসলমানদের অস্তিত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।

মুসলমানরা বিশ্বাস করে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন মহররমের ১০ তারিখে। এ দিনেই তিনি তা ধ্বংস করবেন।

এ দিনেই হজরত আদমের (আ.) সৃষ্টি, জান্নাতে প্রবেশ, পৃথিবীতে প্রেরণ এবং মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে তার তওবা কবুল করেন। এছাড়া আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল এ দিনে। তাই এটি মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন।

1.পবিত্র আশুরা: এমন দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল

হিজরি ৬১ সালের এই দিনে ফোরাত নদীর তীরে ঐতিহাসিক কারবালা প্রান্তরে যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে, তা সমগ্র মুসলিম জাহানকে শোকে-বেদনায় স্তব্ধ করে দিয়েছিল। মহররম মাস এলেই কারবালার সেই বেদনাবিধুর স্মৃতি জেগে ওঠে, প্রত্যেক মুসলমানের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়।

কারবালা প্রান্তরে নৃশংস ঘটনা যখন ঘটে, তখন মুসলিম জাহানে চরম অরাজকতা চলছিল। ইসলামের চার খলিফার স্বর্ণযুগ তখন অতীত। মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদ তখন রাজতন্ত্র ও পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর। প্রিয় নবীর (সা.) দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এ অন্যায় মেনে নিতে পারেননি।

ন্যায় ও সত্যের পতাকা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সুদৃঢ় শপথ নিতে তিনি ইয়াজিদের বিরুদ্ধে এক অসম যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। সে যুদ্ধ ছিল অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার। ইয়াজিদ যুদ্ধের সব রীতিনীতি ভেঙে হত্যা উৎসবে মেতে ওঠে। কারবালা প্রান্তরে পরিবার-পরিজন ও সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নির্মমভাবে শহীদ হন রাসূল (সা.) এর দৌহিত্র।

সত্যের পথে অসীম সাহসী বীর হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তার স্বজন ও সহযোদ্ধারা মৃত্যু অবধারিত জেনেও আপসহীন যুদ্ধ করে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। এমন দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল।

2.পবিত্র আশুরা: এমন দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল

ইয়াজিদ বাহিনী ফোরাতের তীর অবরুদ্ধ করে ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার সহযোদ্ধাদের দিনের পর দিন একবিন্দু পানিও পান করতে না দিয়ে তাদের নিদারুণ কষ্ট দিয়েছে।

পিপাসায় কাতর হয়ে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু ইসলামের মহান শিক্ষা ইমানের পথ থেকে তারা মুহূর্তের জন্য বিচ্যুত হননি। আশুরার এ দিনটি মূলত মুসলমানদের জন্য কারবালার সেই দু:সহ স্মৃতিই বহন করে আনে। এ শোকাবহ স্মৃতিকে মানসপটে রেখে ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগির নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম।

3.পবিত্র আশুরা: এমন দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল

ন্যায় প্রতিষ্ঠার কঠিন সংগ্রামে অসীম সাহসের সঙ্গে আপসহীন লড়াই করে কীভাবে প্রয়োজনে আত্মবিসর্জন দিতে হয়, সে শিক্ষা আমরা লাভ করতে পারি কারবালার মর্মন্তুদ ঘটনা থেকে।

লোভ ও হিংসার ব্যাপকতায় আজ বিশ্বের দেশে দেশে মানবতা হয়ে পড়ছে বিপন্ন। মুষ্টিমেয় মানুষের লোভের কাছে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর শান্তিতে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। এ সময়ে কারবালার মহান আদর্শে আমরা উজ্জীবিত হতে পারি।

ন্যায়ের প্রতি অবিচল নিষ্ঠাই মানুষকে মুক্তি দিতে পারে সব অন্যায় ও অশান্তি থেকে।

ইসলামের সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে এবং মহান আল্লাহর জমিনে তাঁর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করতে এ দিনের তাৎপর্য, গুরুত্ব এবং মর্যাদা উপলব্দি করে উত্তম প্রতিষ্ঠায় তা বাস্তবায়ন করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানের দাবি।

মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে আশুরার রোজা পালনসহ সকল ত্যাগ ও ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সমাজে তা বাস্তবায়ন এবং ইবাদাত-বন্দেগি করে তাঁর নৈকট্য অর্জন ও ক্ষমা লাভের তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)