ধুলিহরে পুলিশ পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা ছিনতাই : ধরা পড়েনি কেউ

নিজস্ব প্রতিনিধি :
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর এলাকা থেকে মৎস্য ব্যবসায়ী এক যুবকের কাছ থেকে পুলিশ পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা ছিনতাইয়ের ২২ দিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় এক ধরনের আতংক ও ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১৭ ডিসেম্বর মাগরিবের আযানের কয়েক মিনিটি আগে সদরের ফিংড়ী ইউনিয়নের কুলতিয়া ঘোষপাড়া গ্রামের পশু চিকিৎসক সত্যরঞ্জন ঘোষের পুত্র চন্দন ঘোষ (২৬) ভ্যানযোগে আশাশুনি-চাপড়া সড়ক দিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিল। এ সময় ভ্যানটি ধুলিহর এলাকার জাহানাবাজ মাদ্রাসার সামনে বটতলায় পৌছালে ৪ যুবক ২টি বাজাজ ডিসকভার মোটর সাইকেলে এসে পথরোধ করে নিজেদেরকে ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ক্যাম্পের সদস্য পরিচয় দিয়ে পিস্তল দেখিয়ে ভ্যান থেকে নামিয়ে নেয়। পরে তাকে বলে তোমার কাছে অবৈধ মালামাল আছে এবং বিভিন্ন কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে জোরপূর্বক মোটর সাইকেলে তুলে রওনা হয়। পরে তাকে নিয়ে যখন সাহেব বাড়ী টু সুপারিঘাটা পুলিশ ক্যাম্পের রাস্তা বাদ দিয়ে ভিন্ন রাস্তায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তখন মোটর সাইকেলে বসে চন্দন বলে আমাকে এদিকে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? এ সময় ওই সমস্ত যুবকরা বলে চুপচাপ বসে থাক, নইলে গুলি করে মেরে ফেলে দেবো। পরে তাকে ধুলিহরের বিভিন্ন ভেতর পথ ঘুরে ধুলিহর তালতলা এলাকায় নিয়ে চন্দন ঘোষের কাছ থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা ও ২টি মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ফেলে রেখে যায়। পরে চন্দন ঘোষ ব্রহ্মরাজপুর বাজারে এসে কয়েকজনের সাথে ঘটনাটি খুলে বলে। ঘটনার দিন রাতেই চন্দন ঘোষ বাদী হয়ে সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগ পেয়েই পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করতে বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধান চালাতে থাকে। ইতিমধ্যে সদর থানা পুলিশ এসব অপরাধীদের ধরতে কয়েক জায়গায় অভিযান চালিয়েছে। এদের কাউকে সনাক্ত করতে পারেনি। তবে অল্প সময়ের ব্যবধানে জড়িতরা গ্রেফতার হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে।
ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর বাবু সানা ঘটনার বিষয়ে জানান, ঘটনাটি আমি লোকমুখে শুনেছি। অপরাধী যেই হোক তাকে খুঁজে বের করতে হবে। এ ধরনের ঘটনা সমাজের জন্য ভয়ংকর। তিনি এদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবী জানান।
ফিংড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শামসুর রহমান ঘটনার বিষয়ে জানান, ঘটনার দিনেই আমি খবর পেয়ে বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করেছি। সমাজে বিশৃঙ্খলা ঘটাতে এসব অপরাধী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ সমস্ত সন্ত্রাসীদের স্ব-মূলে উৎপাটন করা দরকার। নইলে পরবর্তীতে এলাকার আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটবে।
অপর একটি সূত্র জানায়, ধুলিহর এলাকার চিহ্নিত একটি বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে এলাকায়  ও এলাকার বাইরে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ডিবি, সিআইডি ও বিভিন্ন সংস্থার পরিচয় দিয়ে এবং পুলিশ-প্রশাসনের সোর্স পরিচয়ে টাকা ও মালামাল ছিনতাই করে যাচ্ছে। তাদের নামে একাধিক হত্যা, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ও নাশকতার মামলা রয়েছে। মূলত ওই সংঘবদ্ধ ও চিহ্নিত চক্রের সদস্যরা এই ছিনতাইয়ের কাজটি করেছে বলে এলাকার একাধিক সচেতন মহল ধারনা করছে।
চন্দন ঘোষ জানায়, সাতক্ষীরা সহ বিভিন্ন জেলায় আমি ও আমার পার্টনাররা মাছ সরবরাহ করি। এসব মাছের টাকা তারা সাতক্ষীরা ইসলামী ব্যাংকে পাঠিয়ে দেয়। ঘটনার দিন আমি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ব্রহ্মরাজপুর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী খোকনকে ৩৯ হাজার টাকা পরিশোধ করে বাকি টাকা নিয়ে ভ্যানযোগে বাড়ি ফিরতে ছিলাম। ধুলিহর জাহানাবাজ মাদ্রাসার সামনে গেলে পুলিশ পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে আমাকে জোর করে মোটর সাইকেলে তুলে নিয়ে গিয়ে টাকা ছিনতাই করে ৪ যুবক। এ ঘটনায় থানায় আমি অভিযোগ দিয়েছি।
সাতক্ষীরা থানার অফিসার ইনচার্জ মারুফ আহম্মদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বাদী চন্দনের দেয়া কয়েকটি তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালিয়ে মোটিভ উদ্ধার শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অপরাধীরা যে কোন সময় গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই সবকিছু প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)