দেবহাটায় ভূমিহীন সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে নির্বাহী অফিসারের নিকট স্মারকলিপি প্রদান
দেবহাটায় ভূমিহীন সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে নির্বাহী অফিসারের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। সোমবার বেলা ২টায় নোড়ারচক ভূমিহীন সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপি সুত্রে জানায়, দেবহাটা-কালিগঞ্জ উপজেলাধীন ১০টি গ্রামের মধ্যে নোড়ার চারকুনি আবাদের ৬৪৯.৩০ একর কামিনিবসু ৭০ ও ঢেপুখালি ২৯ একর খাস জমি কথিত বিশেষ জলমহাল শ্রেণি থেকে অবমুক্ত করে কৃষি খাস জমিতে রুপান্তিত করে সেখানে বসবাস করা প্রায় ১ হাজার পরিবারসহ অন্যান্য এলাকার ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত প্রদান করার দাবিতে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ ল্যান্ড হোল্ডিং লিমিটেশন অর্ডার ১৭২ বা পিও ৯৮/৭২ এর বলে বাংলাদেশ সরকার জেলার দেবহাটা ও কালিগঞ্জ উপজেলার আওয়াতাধীন ঢেপুখালি, পূর্ব ঢেপুখালি, পশ্চিম ঢেপুখালি, কাঠমহাল, কামিনি বসু, কালাবাড়িয়া-১, কালাবাড়িয়া-২, নোড়া চারকুনি, ঝেয়ামারি, ভাঙ্গানমরি ও বাবুর আবাদ ১০টি গ্রামে ৩১৭৮ একর জমি (কেবলমাত্র স্বর্ণকার ও ব্রা পরিবারে) অধিগ্রহণপূর্বক খাস ঘোষণা করে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্থানীয় ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালীরা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে জমির রেকার্ডীয় মালিক দাবি করে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। সর্বশেষ ১০৮২ সালে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টর আপিল বিভাগের রায়ের মাধ্যমে উক্ত জমিকে কৃষি খাস জমি হিসাবে ১ নং খাস খতিয়ান ভুক্ত করে তা ভূমিহীনদের মধ্যে স্থায়ীবন্দোবস্থা প্রদানে আদেশ দেন। পরবর্তীতে উক্ত জমিতে শত শত ভূমিহীনরা ঘরবাড়ি তৈরি করে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস শুরু করে। ১৯৮৫ সালে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের প্রভাবে সরকার উক্ত কৃষি খাস জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে বিশেষ জলমহাল হিসাবে নোড়া চারকুনি আবাদকে জলমহাল ঘোষণা করে। ফলে ভূমিহীনদের মাঝে স্থায়ীবন্দোবস্থ স্থাপিত হয়ে যায়। ১৯৯২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের অনুসারি কিছু ব্যক্তির সুবিধার জন্য উক্ত জমি পুন:রায় শ্রেণি পরিবর্তন করে বিশেষ চিংড়ি মহাল ঘোষণা করে। এরপর ১৯৯৮ সালে ১০ মে ও ২৭ জুলাই ভূমিহীন পল্লীতে হামলা হয়। এই হামলায় ভূমিহীন নেত্রী জায়েদা শহীদ হন এবং ২২৯জন নারী, পুরুষ ও শিশু আহত হন। জালিয়ে দেওয়া হয় শতশত বাড়িঘর। এঘটনায় স্থানীয় পর্যয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে সেসময় বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা দেবী শহর মাঠে ভূমিহীন সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। ঐ সমাবেশে তিনি ভূমিদস্যুদের ইজারা বাতিল করে খাস জমি প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে বণ্টন করার ঘোষণা প্রদান করেন। সেই থেকে ইজারা প্রদান বন্ধ সহ ভূমিহীনদের মাঝে খাস জমি বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরই মধ্যে সরকার ৩১৭৮ একর জমির মধ্যে প্রায় ১২শত একর খাস জমি ১১শত পরিবারের মাঝে বন্দোবস্ত দলিল প্রদান করেছে। এদিকে নোড়ার চারকুনি আবাদসহ অন্যভূমিহীন এলাকায় ৭৫৮.৩০ একর খাস জমি কথিত জল মহাল শ্রেণি হতে অবমুক্ত পূর্বক কৃষি খাস জমিতে রুপান্তিত করে বসবাসরত ৯৬০ পরিবারের মাঝে স্থায়ী বন্দোবস্ত দলিল প্রদানের দাবি জানানো হয়। স্মারকলিপি প্রদান কালে উপস্থিত ছিলেন নোড়া চারকুনি ভূমিহীন সংগ্রাম কমিটির জেলা বাস্তহারালীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ, সভাপতি আব্দুল গফ্ফার, সহ-সভাপতি আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম নজু, সাংগঠনিক সম্পাদক মহাতাব আলী, দপ্তর সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, ভূমিহীন নেতা আব্দুল মালেক, রুহুল আমিন প্রমুখ।