দেবহাটার পুষ্পকাটি শিশুর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় ৬জনকে আসামী করে হত্যা মামলা

দেবহাটার পুষ্পকাটি শিশুর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় ৬জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার শিশুর মা সার্জিনা বেগম বাদী হয়ে ৬জনকে আসামী করে এ হত্যা মামলা দায়ের করেছে। যার নং-১০/১১৪ তারিখ: ২২/০৯/২০১৮ ইং। উল্লেখ্য, শুক্রবার ভোর ৬টায় কুলিয়া ইউনিয়নের পুষ্পকাটি গ্রামের ফরহাদ হোসেনের কন্যা ফারিয়া সুলতানা তমা(৪) নামের শিশুর ভাসমান লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে লাশটির ময়নাতদন্ত শেষে ঐ রাতেই ১১টার দিকে পারিবারিক কবর স্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এ ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে শিশুর পিতা ফরহাদ হোসেন, দাদা আবু সালেক ও ফরহাদ হোসেনর মামা আকরাম সরদারের পুত্র রজব ও আকবর এবং বন্ধু আফসারের পুত্র আব্দুল আলিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দেবহাটা থানায় নিয়ে আসা হয়। রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শনিবার দুপুরে মামলা দায়েরের পর তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। জানা যায়, সম্প্রতি একটি অস্ত্র মামলায় পুষ্পকাটি গ্রামের কেয়ামদ্দীন গাজীর পুত্র মোকছেদ আলী পুলিশের হাতে আটক হয়। আর এই মামলায় সাক্ষী করা হয় পুষ্পকাটি গ্রামের লিয়াকাত আলীর পুত্র রিপন ও শওকাত সরদারের পুত্র নাজমুল হুদাকে। ঘটনাটি নিয়ে মোকসেদ গ্রুপের সাথে রিপন ও নাজমুল হুদার বিরোধ চলে আসছিল। তারই সূত্র ধরে রিপন ও নাজমুল হুদাকে ফাঁসাতে প্রতিবেশী ফরহাদের ৪বছরের শিশু কন্যা ফারিয়া সুলতানা তমাকে বৃহস্পতিবার রাতের কোন এক সময় হত্যা করা হয়েছে বলে ধারনা করছে স্থানীয়রা। এদিকে শিশুকন্যা ফারিয়া হত্যাকান্ডের নেক্কার জনক ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পাশাপাশি প্রকৃত হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। নিহত শিশুর পিতা ফরহাদ হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার মাগরিবের পরে আমি আমার কন্যাকে নিয়ে বাড়ির পাশে এবাদুলের দোকানে খাবার কিনতে যাই। দোকন থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাঁশ বাগানের সামনে পৌঁছানো মাত্রই রিপন ও নাজমুল সহ ৭-৮জন লোক এসে আমার মাথায় বাড়ি মারলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তখন তারা আমার কন্যাকে নিয়ে চলে যায়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমার জ্ঞান ফিরলে আমি আমার বন্ধু মোকছেদের ভাইপো আলিমের কাছে ফোন করি। সে এসে আমাকে উদ্ধার করে মোকছেদের ভাই কওছারের বাড়িতে নিয়ে যায়। ঐ রাতেই আমাকে এ্যাম্বুলেন্স যোগে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে ফরহাদ যে মাথায় বাড়ি মেরে আঘাত করার অভিযোগ করেছে, তার মাথায় কোন আঘাতের চিহ্ন নেই বলে জানায় প্রতিবেশীরা। এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম রব্বানী জানান, আমি ঘটনাটি শোনা মাত্রই ঘটনাস্থলে যাই এবং দেবহাটা থানার ওসিকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছি। পরে গ্রাম্য ডাক্তার আবু রায়হানের পরামর্শে তার সাথে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এবিষয়ে কওছারের স্ত্রী ছায়রা খাতুন বলেন, আমার ভাশুরের ছেলে আব্দুল আলিম ফরহাদকে অসুস্থ অবস্থায় আমার বাড়িতে নিয়ে আসে। সে গুরুতর অসুস্থ থাকায় আমরা তার শরীরে তেল মালিশ করি। পরে স্থানীয় ডাক্তার এসে তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। এব্যাপারে নাজমুল হুদা জানান, আমি ১৯তারিখ সন্ধ্যায় সৌদিয়া পরিবহনে পরিবার সহ খালার বাড়িতে চট্টগ্রাম এসেছি। আমি মোকছেদের অস্ত্র মামলার সাক্ষী হওয়ায় আমাকে ফাঁসানোর জন্য মোকসেদ বাহিনীর লোকজন এ অপ-প্রচার চালাচ্ছে। এবিষয়ে রিপন বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মোকছেদগণরা নিজেরাই সাজানো নাটক করে আমার বিরুদ্ধে হত্যা কান্ডের দায় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কারণ আমি মোকছেদের অস্ত্র মামলার সাক্ষী। আমি এমন জঘন্য ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। এব্যাপারে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ মান্নান আলী জানান, শিশুর মা সার্জিনা বেগম বাদী হয়ে ৬জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)