তালা কপোতাক্ষ নদের ভেড়িবাঁধের মাটি যাচ্ছে ইটের ভাটায়

স্টাফ রিপোর্টার :
তালা কপোতাক্ষ নদের ভেড়িবাঁধের মাটি কর্তন নিয়ে ”দৈনিক সাতক্ষীরায়”সংবাদ প্রকাশরে পর টনক নড়েছে প্রশাসনের। বুধবার সকালে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গোনালী এলাকায় আরবিএস  ইটের  ভাটায় অবৈধ মাটি কর্তন চলছলি। কিন্তু ”দৈনিক সাতক্ষীরায়” সংবাদ প্রকাশে প্রশাসনের নজরে  আসায় আজ বেলা  ১১ টার দিকে  মাটি কর্তনের  কাজ বন্ধ করে দেওয়া  হয়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্ততি চলছে ।

তালা উপজেলার  খলিলনগর ইউনিয়নের  তহশীলদার আবুল হাসানাত জানান, কপোতাক্ষ নদের  বন্যা নিয়ন্ত্রণ ভেড়িবাধের মাটি কর্তন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় তাদরে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । এঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে ।

2018-01-30_205705বুধবার সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা  যায়, ১৫-২০ জন শ্রমিক বেড়িবাঁধের মাটি কর্তনের কাজ করছে । কেউ ভ্যানে কেউ ঝুড়িতে করে মাটি নিয়ে যাচ্ছে ভাটায় । স্থানীয় লোকজনের ক্ষোভ থাকলে ভাটামালিকদের অত্যাচারের  ভয়ে কেউ মূখ খুলতে পারছেনা  না। তবে তাৎক্ষণিক ভাবে  মোবাইল ফোনে বিষয়টি  সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে জানানো  হয়। এক ঘন্টার মধ্যে খলিরনগর ইউনিয়নের  তহশীলদার সরজমিনে গিয়ে তাদের মাটি কর্তনের কাজ বন্ধ করে দেন ।
এসময় গোনালী গ্রামের চায়না বিশ্বাস জানান  , আমরা ঝাটা জুতা নিয়ে মিছিল করেও লাভ  হয়নি । টাকার কাছে সব হেরে  যায়। ‘আপনারা দেখেন  যে ভাবে মাটি কাটা হচ্ছে , তা  সামান্য বৃষ্টিতেই বাঁধ ধষে পড়বে ।’  এখানে আমরা ধান চাষ করতাম, বন্যার সময় ভেড়িবাঁধে  বসবাস করছিলাম  সেই ভেড়িবাঁধের জায়গা কেটে পুকুর করে ইট ভাটার কাজে লাগানো হচ্ছে বলে জানান তিনি ।
প্রকাশ থাকে যে, গত ৮ দিন ধরে গোনালী এলাকায় আরবিএস  ইটের  ভাটা কপোতাক্ষ নদের ভেড়িবাঁধ থেকে মাটি কেটে ইট বাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছে । এজন্য বাঁধের পাশেই পুকুর কাটছে ভাটা মালিকরা। ফলে বর্ষা মৌসুমে ভেড়িবাঁধ ধষে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংক্কা করছে এলাকাবাসী।

অথচও ওই বাঁধের ওপর কোনো ধরণের কার্যক্রম করা যাবে না মর্মে হাইকোর্টের আদেশ থাকলেও ভেড়িবাঁধের পাশে থেকে মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছে আরবিএস ইট ভাটা মালিক।

তালা উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে গোনালী আরবিএস ইট ভাটা। ভাটার সীমানা গোনালী খেয়াঘাট সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে থেকে এ মাটি কাটা হচ্ছে।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কপোতাক্ষ নদের সীমানা মধ্যে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। নদ ভরাট হয়ে জেগে ওঠা চরের জমি ভাটার লোকজন দখল করে রেখেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে পুকুর খনন করে ভাটার জন্য মাটি তোলা হয়েছে।
গোনালী গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ২০১১ সালে এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। প্রাায় ছয়-সাত মাস কয়েক হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে বিভিন্ন এলাকায় মানবেতর জীবন যাপন করে। চলতি বছর ওই এলাকার আরবিএস ইট ভাটার জন্য ভেড়িবাঁধের পাশে থেকে মাটি কাটছে। এজন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মূখে রয়েছে।
মাটিকাটার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, আরবিএস ইট ভাটার ম্যানেজার সুদেল ইকবালের নেতৃত্বে শ্রমিক হিসেবে তারা মাটি কাটছেন। গত পাঁচদিন যাবত তাদের এ মাটি কাটা চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শ্রমিক জানান, যে ভাবে মাটি কাটা হচ্ছে, তা সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্যানিয়ন্ত্রণ ভেড়িভাঁধ ধষে পড়বে। এতে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হবে।
দক্ষিণ নলতা  গ্রামের ময়েজ উদ্দীন ও তফেলউদ্দিন জানান, গোনালী এলাকায় কপোতাক্ষ নদের তীরের উত্তর পাশে সাতক্ষীরা শহরের চালতেতলা এলাকার আতিয়ার রহমান কয়েক বছর আগে ২৫ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে আরবিএস ইটের ভাটা প্রতিষ্ঠা করেন। পরে কপোতাক্ষ নদের ভরাট হওয়া প্রায় ১০-১৫ বিঘা জমি দখল করে চালাচ্ছেন ভাটার কার্যক্রম।
আরবিএস ভাটার ম্যানেজার সুদেল ইকবাল হোসেন জানান, মাটি কাটার কোনো অনুমোদন নেই। প্রতিবছর কাটি তাই এ বছরও কাটছি। কোনো অনুমোদন নেওয়া নেই। তবে পত্রিকায় লিখে লাভ হবে না। সবার সাথে কথা বলা আছে।
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হাসান হাফিজুর রহমান জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই । তবে কেউ বাঁধের থেকে মাটি কাঁটলে তার বির”দ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফরিদ হোসেন বলেন, কপোতাক্ষ নদের বাঁধ থেকে মাটি কাটা অন্যায় । কেউ মাটি কাটলে তার বির”দ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহ প্রকৌশলী প্রবীর গোস্বামী জানান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের থেকে মাটি কাটলে জড়িতদের বির”দ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা  জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দীন জানান বিষয় টি আামি শুনেছি । তদন্ত করে ব্যবস্তা নেওয়া হবে ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)