তালায় পাতানো সালিশে ৭৫ হাজার টাকা সুদ ৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা

তালায় পিতার মৃত্যুর পর বাগদা পোনার ৭৫ হাজার টাকা সুদসহ ৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা পরিশোধ করতে সন্তানকে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ২১ জুলাই শনিবার রাতে উপজেলার জিয়ালানলতা শেখেরহাট এলাকায়। অভিযুক্ত ব্যক্তি তালা উপজেলার আটারই গ্রামের মৃত মো. জহর আলী জোয়াদ্দারের ছেলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব জালাল জোয়াদ্দার। সালিশি বৈঠকে উপস্থিত ৭/৮ সদস্যের মধ্যে অনেকেই পাতানো সালিশ বলে মন্তব্য করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, তালা উপজেলার জিয়ালানলতা গ্রামের মরহুম সিরাজুল ইসলাম একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান ঘের ব্যবসায়ী ছিলেন। ২০০৩ সালে খুলনা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে তার স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেল দুর্বৃত্তরা বোমা মেরে তাকে হত্যা করা হয় এবং এই হত্যা মামলার ১নং আসামী তালা উপজেলার আটারই গ্রামের মৃত মো. জহর আলী জোয়াদ্দারের ছেলে ঘের ব্যবসায়ী জালাল জোয়াদ্দার। এলাকাবাসী আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে গুঞ্জন চলে আসছে। হঠাৎ শনিবার রাতে ৭/৮ জন ব্যক্তিকে নিয়ে উপজেলার শেখের হাট নামক বাজারে জিয়ালা নলতা গ্রামের নন্দ লাল ঘোষ কে সভাপতি করে এক গ্রাম্য সালিশি বৈঠক বসে। সালিশি বৈঠকে জিয়ালা গ্রামের মকবুল হোসেন পাড়, জিয়ালা ঘোষপাড়ার স্বদেশ ঘোষ, খিতিষ ঘোষ, অরুণ ঘোষ, পঞ্চা ঘোষ, কার্ত্তিক ঘোষ এবং আটারই গ্রামের হায়দার আলী মোড়লসহ ৩০/৩৫ জন গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে সালিশি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাত ৯টা থেকে শুরু করে রাত ১টা পর্যন্ত দীর্ঘ চার ঘন্টা আলোচনা চলে। একপর্যায় সভাপতি ছাড়া স্বদেশ ঘোষ নেতৃত্বে ৫ জন উঠে গিয়ে গোপন বৈঠক করে স্বদেশ ঘোষ সোহেলকে বলে, তোমার বাবার এবং আমরা এক সাথে ব্যবসা, উঠাবসা চলাফেরা করেছি। তুমি আমাদের ছেলের বয়সী আমরা যা সালিশ করবো তা উভয় পক্ষ মেনে নিতে হবে। সকলের প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রস্তাবটি মেনে নেয় সোহেল রানা। এ সময় স্বদেশ ঘোষ জানায়, তোমার বাবার রেখে যাওয়া ঋণের টাকা হিসাব নিকাষ করে ৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা হয়েছে। সন্তান হিসেবে এই টাকা তোমাকে পরিশোধ করতে হবে এবং সেটি বাধ্যতামূলক। এ সময় সালিশের সভাপতি নন্দলাল ঘোষ সিদ্ধান্তটি না মেনে এটা কোন সালিশ না বলে চলে যায়। উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ জালাল জোয়াদ্দার ও স্বদেশ ঘোষের পাতানো সালিশের সিদ্ধান্তকে ধিক্কার দিয়ে প্রশাসনের উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে স্থান ত্যাগ করে।

এ ব্যাপারে সিরাজুল ইসলামের ছেলে সোহেল রানা জানায়, বাবার মৃত্যুর পর তার ব্যবহৃত ডায়েরীতে লেখা বাগদার পোনা বাবদ মো. আনোয়ার হোসেন (আনু) ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাবে। সেই সুবাদে মরহুম পিতার ঋণের টাকা পরিশোধ করতে ছেলে সোহেল রানা আনু মিয়ার কাছে বিষয়টি জানায়। এ সময় আনু মিয়া ৭৫ হাজার টাকা গ্রহণ করে বাকী ৭৫ হাজার টাকা জালাল জোয়াদ্দারের নামে খাতায় লিখে দিয়ে তাকে দিতে বলে। একই দিনে সোহেল রানা জালাল জোয়াদ্দারের সাথে দেখা করে তার পাওনা ৭৫ হাজার টাকা বুঝে নিতে বলে। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পরে সন্তান সোহেল রানা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে মরিয়া হয়ে মাঝে মধ্যে বিষয়টি তাকে অবহিত করলেও কোন কর্ণপাত করেনি। সম্প্রতি কিছু লোকজন ডেকে নিয়ে সালিশি বৈঠক এর নামে গোপন বৈঠক বসিয়ে ৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা জোরপূর্বক পরিশোধ করতে বাধ্য করে। তখন আক্ষেপ করে সোহেল রানা জানায়, বাবাকে হত্যা করে ক্ষান্ত না হয়ে এখন আমার মত একজন এতিম সন্তানকে আর্থিকভাবে হত্যা করছে। এটাই কি সমাজের বিচার! তিনি এহেন কর্মকাণ্ডের বিচার দাবী করেছেন।

উপস্থিত সালিশি সভাপতি নন্দলাল ঘোষ জানান, জালাল জোয়াদ্দার শনিবারে সকালে আমার বাড়ি উপস্থিত হয়ে বলে সন্ধ্যায় বাজারে সোহেল এর সাথে লেনদেন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বসাবসি আছে আপনি থাকবেন। যথা সময়ে উপস্থিত হই এবং আমাকে সভাপতি করে ৭ সদস্যের একটি মুল টিম গঠন করে এসময় আরও ৩০/৩৫ জন গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলো। সালিশে কথাবার্তা বলার একপর্যায় স্বদেশ ঘোষসহ ৫ জন উঠে অন্যত্র গিয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে এসে আমাকে না জানিয়ে স্বদেশ ঘোষ ৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা সোহেল জালাল জোয়াদ্দারকে দিবে। সিদ্ধান্তটি আমার পরিকল্পিত মনে হওয়ায় সালিশ না মেনে আমি চলে আসি।

এব্যাপারে জালাল জোদ্দার জানায়, ১৪ বছর আগে ৭৫ হাজার টাকা ফেরত পেতাম তাহলে ২বিঘা জমি কিনলে এর চেয়ে বেশি লাভ হতো। আপনারা যেটি সত্য সেটি লেখেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)