তালার ৪ লক্ষ মানুষের বিপরীতে দু’জন চিকিৎসক

তালা উপজেলার চার লাখেরও বেশি মানুষের স্বাস্থ্য সেবা চলছে দুইজন চিকিৎসক দিয়ে। এ ছাড়া হাসপাতালের মূল ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এমনকি রোগীদের গায়ে মাঝে মধ্যে ভবনের পলেস্তার খসে পড়ছে। এ কারণে অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে অনীহা প্রকাশ করেন। ফলে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে রুগীদের ভর্তি করেন। আর যে রুগী গুলো হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় মাঝেমধ্যে ডাক্তারগণ দায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের খুলনা সহ বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করেন। তাছাড়া ব্যবস্থাপত্রে প্রয়োজন অতিরিক্ত ঔষধ লেখার অভিযোগ রয়েছে ডাক্তারের বিরুদ্ধে। এছাড়া, হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পরীক্ষার সরঞ্জাম থাকলেও তারা সেগুলো ব্যবহার না করে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে ফোন করে লোকে ডেকে এনে রুগীদের পরীক্ষা করার। এ সব ডায়াগনস্টিক সেন্টার হতে ডাক্তারগণ একটি নিদিষ্ট অর্থ নিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এই সকল সমস্যায় জর্জরিত তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা সেবা।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, চার লাখেরও বেশি জনসংখ্যা এই উপজেলায়। তার বিপরীত রয়েছে মাত্র দুই জন ডাক্তার। ১৯৭২ সালে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। উপজেলার ৫০ শয্যার এ হাসপাতালের আওতায় ১২ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসহ (সাব সেন্টার) রয়েছে। দুইজন ডাক্তার দিয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসা সেবা চলছে।অন্যদিকে, বাকী চিকিৎসকের পদ দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ শূন্য রয়েছে।

চার লক্ষ মানুষের চিকিৎসার জন্য রয়েছে মাত্র দুই জন ডাক্তার। ফলে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জনবল সংকটে নষ্ট হচ্ছে এক্স-রে, ইসিজি, জেনারেটরসহ কোটি কোটি টাকার অপারেশন থিয়েটারের সরঞ্জাম।
অপরদিকে, তালা হাসপাতালে স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় কর্মচারীর দাপটে অসহায় ডাক্তাররা বেশীদিন টিকতে পারেন না বলেও জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। হাসপাতালে ডাক্তার সংকট, ঔষুধ সংকট, নোংড়া শৌচাগার, খাবার পানির সংকট, লাইট ও ফ্যান নষ্ট ইত্যাদি সমস্যা নিত্যদিনের।

এ ছাড়া হাসপাতালের মূল ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ভর্তি রোগীদের গায়ে মাঝে মধ্যে ভবনের প্লাস্টার খসে পরছে। এ কারণে অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে অনীহা প্রকাশ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, তালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ একটি বিষয় সবার নজরে আসে।সেটি হচ্ছে সরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার ভ্যান ঝুলছে। আচ্ছা, সরকারির অফিস বা হাসপাতালে এনজিও ফ্যান কেন -ই বা দিবে আর হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ সেটা কেন-ই বা গ্রহণ করবে? এখানে সরকারি ভ্যান ছিল সেগুলো কোথায় গেল?

তালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর আবাসিক চিকিৎসক রাজীব সরদার জানান, দুই জন ডাক্তারের পক্ষে এত বড় একটি এরিয়ার সকল রুগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান সম্ভব নয়। এ জন্য মাঝেমধ্যে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হতে পারে। আমরা ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন রুগীকে খারাপ চিকিৎসা দেয় না।সকল রুগীকে সমান নজরেই দেখি।

বিভিন্ন সংকটের কথা ও চিকিৎসক শূন্যতার কথা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কুদরত-ই-খূদা বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকার জানানো হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। দুই জন ডাক্তার দিয়ে সকল রুগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)