ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি তোয়াক্কা না করে বিমান হামলা রাশিয়ার

রাশিয়ার যুদ্ধবিমান থেকে পরপর ২৩টি হামলা চালানো হয় সিরিয়ার বিদ্রোহীদল অধ্যুষিত ইদলিবের বিভিন্ন স্থানে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেয়া হুঁশিয়ারি বার্তার এক ঘন্টার মধ্যেই রাশিয়া এই বিমান হামলা চালালো। ইদলিবে প্রায় ৩০ লাখ বেসামরিক নাগরিকের বাস যারা ইতোমধ্যেই তাদের সর্বস্ব হারিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছিল।

ট্রাম্প তার হুঁশিয়ারি বার্তায় বাশার আল আসাদ ও তার মিত্র জোটের সদস্যদেরকে ইদলিবে হামলা করা থেকে বিরত থাকতে সাবধান করেছিলেন। ইদলিবে কোনো রকম হামলা হাজারো নিরাপদ মানুষের মৃত্যুর কারণ হবে। আর এ ভুলের দায় নিতে হবে বাশার সরকার ও তার মিত্রজোটকে।

জাতিসংঘের এক বার্তায় জানানো হয়, বাশার সরকার সিরিয়া থেকে বিদ্রোহীদের হটাতে পারলেও ইদলিবই ছিল একমাত্র অবশিষ্ট স্থান যেখানে প্রায় ১০ হাজার বিদ্রোহী আশ্রয় নিয়ে আছে।

বিদ্রোহীরা জানায় রাশিয়ার বিমান হামলার লক্ষ্য ছিল এমন এমন অবস্থান যেখানে ইসলামি দল ‘হায়াত আল শাম’ ও তুর্কি ইসলামি বিদ্রোহী দল যারা জিসর আল-শুঘর জেলায় অবস্থান করছিল। টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে ৩ বেসামরিক নিহতের খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি তোয়াক্কা না করে বিমান হামলা রাশিয়ার

সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের নিকটবর্তী ভূমধ্যসাগরে রাশিয়া ইতোমধ্যেই একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে যার মধ্যে একটি ‘মার্শাল উস্তিনভ মিসাইল ক্রুজার’ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন আক্রমণের কথা মাথায় রেখেই রাশিয়া এসব সাঁজোয়া যান পাঠিয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রচারিত এক সতর্ক বার্তায় জানানো হয়, এই অভিযানে কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারাতে পারে। রুশ বিমান হামলার ঘটনা সত্য হলে এটি হবে গত তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রথম হামলা। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত নিকি হ্যালি বলেছেন, ইদলিবে আসাদ, রাশিয়া ও ইরানের পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই।

সিরিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ‘টেলিগ্রাফ’ জানায়, ‘পরিকল্পনা পুনর্বহালের জন্য সর্বাধিক সম্ভাব্য সুযোগ দিতে সরকারের পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এই বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি’।

রাশিয়া ও সিরিয়া ইদলিবে মানবিক বিপর্যয় এড়ানোর চেষ্টা করবে এবং এর পরিবর্তে সেখানে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আরো সুদৃঢ়ভাবে কাজ করা হবে বলে টেলিগ্রাফকে জানায় জয়েন্ট চীফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান মেরিন জেনারেল জোসেফ ডনফোর্ড।

ওয়াশিংটন রাসায়নিক অস্ত্রের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এই অস্ত্র ব্যবহার করা হলে, ট্রাম্প দমনমূলক স্ট্রাইকগুলির একটি নতুন রাউন্ড অর্ডার করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

আনুমানিক ৩০ লাখ মানুষের বাস ইদলিবে যাদের অর্ধেক সিরিয়ার অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন। ইদলিবে হামলা হলে এসব বাস্তচ্যুত লোকদের জীবন বিপন্ন হবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় ৮ লাখ লোক আবারও বাস্তুচ্যুত হতে পারে নতুন এই হামলার কারণে। এখানে ইতোমধ্যেই বিপুল সংখ্যক লোক সাহায্যের জন্য আশ্রয় নিয়েছিল। খবর সংবাদ সংস্থা ‘রয়টার্সের’।

এদিকে দ্য সিরিয়ান অবজারভেটরি জানায়, রাশিয়ার জঙ্গি বিমানগুলো থেকে ইদলিবের পশ্চিমে, লাটাকিয়ার পার্বত্যাঞ্চলে এবং শাল আল-ঘুর সমতলে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত প্রায় ১৬টি এলাকায় রাশিয়ার জঙ্গিবিমানগুলো থেকে প্রায় ৩০টি বোমা হামলা হয়েছে।

ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কোভ বলেন, আমরা জানি যে সিরিয়ার সশস্ত্র বাহিনী এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। ইদলিবকে ‘সন্ত্রাসের পকেট’ বলে সম্বোধন করেন তিনি।

তিনি ট্রাম্পের সতর্কবার্তা নিয়ে টেলিগ্রাফকে বলেন, ‘পরিস্থিতি বিপজ্জনক, তাই সমগ্র দেশের জন্য ফলাফল নেতিবাচক হতে পারে।’

প্রদেশটি বিদ্রোহী জিহাদীদের দ্বারা পরিচালিত, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি বাহিনী বিশ্বে ‘সন্ত্রাসী’ হিসাবে কালো তালিকাভুক্ত।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ব্যাপক আকারে মানবিক বিপর্যয় এড়াতে এখনও একটা আলোচনার দ্বার খোলা আছে।

তুরস্ক, রাশিয়া ও মিত্র ইরানের রাষ্ট্রপ্রধানরা আগামী শুক্রবার তেহরানে একটি শীর্ষ সম্মেলনের জন্য মিলিত হবেন। যেখানে ইদলিব বিষয়ক পরিকল্পনার ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দ্যা ‘টেলিগ্রাফেরর’ প্রতিবেদনে নিউ আমেরিকান নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিকোলাস হেরাস বলেন, ‘রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিমান হামলার দ্বারা ট্রাম্পকে একটা স্পষ্ট বার্তা পাঠিয়েছেন যে, তারা আসাদ সরকারকে পিছু হটার কথা বলতে পারবে না। এদিকে তুরস্ক প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে নিশ্চিত করতে হবে যে, সিরিয়াতে তার আগ্রহের বিষয় কী।’

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)