ঝাউডাঙ্গা বাজারের ৩নং গলিতে ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ

দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানে জেলায় মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রেপ্তার ও ক্রসফায়ার আতঙ্কে গা ঢাকা দেয়ায় মাদক চোরাচালান কমে যাওয়ায় যুবক মাদকসেবীরা এখন দেশী মদের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। আর এ সুযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদিত জেলার দেশী মদের দোকান মালিকরা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৫/৬ গুন বেশি দামে ও মদের সাথে পানি মিশিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক মাদকসেবীর। অপরদিকে স্থানীয় সুশীল সমজের দাবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সরকারের নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকাশ্যে মদ বিক্রি করায় ধ্বংস হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ যুব-সমাজ। এছাড়া সরকারের মাদক বিরোধী অভিযানের সফলতাকে ম্লান করে দিচ্ছে এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, জেলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদিত তিনটি দেশী মদের দোকান রয়েছে। এসব দোকানগুলি হচ্ছে শহরের বড় বাজার,ও কালিগঞ্জ বাজারে। আরেকটি সদর উপজেলা ঝাউডাঙ্গা বাজারে। এর মধ্যে কলারোয়া উপজেলা ও সদর উপজেলার মধ্যবর্তী ঝাউডাঙ্গা বাজারের রাধেশ্যামের ‘দেশী মদের দোকানটি’ বেশি পরিচিত। এছাড়া দুই উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে দেশী মদের দোকান হওয়ার সুযোগ নিয়ে দোকান মালিক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রতি মাসে চাহিদার তুলনায় বেশি মদ খুলনা সরকারি ডিপো থেকে উত্তোলন করে আসছে। তিনি প্রতি মাসে সরকার নির্ধারিত মূল্যে লিটার প্রতি ১৫৭ টাকা যার মধ্যে ভ্যাট বাবদ ৯৯ টাকা , দরে ১হাজার লিটার মদ উত্তোলন করে। দোকানটি সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নির্দিষ্ট সময়ের পরও দোকান খোলা রেখে মদ বিক্রি করছে। শুক্রবার দোকান সম্পূর্ণ বন্ধ থাকার নিয়ম থাকলেও সেটি না মেনে অবৈধভাবে রমরমা ব্যবসা পরিচালনা করেছে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, বর্তমান মাদক বিরোধী অভিযানের কারণে জেলায় মাদকের চোরাচালান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাদকসেবীরা দেশী মদের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। আর এ সুযোগে সরকার নির্ধারিত ১৫৭ টাকা দরে কেনা এক লিটার মদ বর্তমানে বিক্রি করছে ৮০০/১০০০ টাকায়। এছাড়া সকাল ৮টা থেকে একটানা রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দোকান খোলা রেখে মদ বিক্রির পাশাপাশি নিষিদ্ধ পলিথিনে প্যাকেট করে মদ বিক্রি করছে।
স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী উত্তম ঘোষ জানান, আমি কোন দিন মদ পান করিনি অথচ দোকান মালিক তার রেজিস্টারে আমার নাম ও ঠিকানা লিখে রেখেছে। তিনি বলেন, আমি নাকি তার দোকান থেকে নিয়মিত মদ পান করি। তিনি দাবি করে বলেন, আপনারা খোঁজ নিন মদের দোকানে উল্লেখিত নামের ব্যক্তিরা অধিকাংশই মদ পান করেন না। সব প্রশাসনের ম্যানেজ করে ভুয়া সরকারি পারমিট করে এসব নাম ব্যবহার করে তিনি অন্য মানুষের নিকট মদ বিক্রি করেন। আর অফিসাররা আসলে এধরনের নাম দেখিয়ে দেন। তিনি আরো বলেন, বাজারের ৩নং গলি নামে পরিচিত এই মদের দোকানে বর্তমানে স্কুল-কলেজের ছাত্র ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সী শ্রেণি-পেশার কয়েক শত মানুষ প্রতিদিন মদ পান করতে আসছে। এরমধ্যে শিক্ষার্থী ও যুবকরা প্যাকেটে করে মদ (নিষিদ্ধ পলিথিনে) নিয়ে যায়। সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে যুবকদের আসা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সন্ধ্যার পর বিভিন্ন বয়সী মানুষের পদচারণয় ৩নং গলি জমজমাট হয়ে ওঠে। এ সময় দোকানে কোন সরকারি সেলস্ ম্যান ও কর্মচারী না থাকায় মালিক বহিরাগত লোকজন দিয়ে মদ বিক্রি করে থাকে। তিনি এসব অনিয়ম ও যুবকদের নিকট মদ বিক্রি বন্ধের জন্য দোকান মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
ঝাউডাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির একাধিক নেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, এখানে অনিয়ম ও দুর্নীতি দেখার কেউ নেই। দোকান মালিক ১ হাজার লিটার মদের সাথে ৫শ’ লিটার পানি মিশিয়ে লাখ লাখ টাকা লাভবান হচ্ছে। ভিন্ন নাম ব্যবহার করে যুবকদের কাছে মদ বিক্রি করছে। স্থানীয় অভিভাবকরা এসব অনিয়মের ঘটনা উল্লেখ করে জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অবহিত করলেও আজ পর্যন্ত দোকান মালিকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এ সময় তারা সাংবাদিকদের সেখানে কিছু সময় অবস্থান করার অনুরোধ করে বলেন, আপনারা নিজেরা দেখে যান বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্র-যুবকরা কিভাবে প্রকাশ্যে ক্রয় ও মদ পান করছে এবং পলিথিন প্যাকেটে মদ নিয়ে চলে যাচ্ছে। তাদের দাবি, এসব মদের দোকানে কঠোর নজরদারি না করলে সরকারের মাদক বিরোধী অভিযান বিফলে পাবে।

ঝাউডাঙ্গা দেশী মদের দোকান মালিক রাধেশ্যাম ঘোষের নিকট বিভিন্ন অনিয়ম ও কর্মকর্তাদের ঘুষ প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব ব্যবসা করলে অনেক দিকে সামাল দিতে হয়। অনেক ভুল-ভ্রান্তি হতেই পারে। আমরা সবাইকে ম্যানেজ করেই ব্যবসা করি। আপনি আমার দোকানে আসেন এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলবো।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাতক্ষীরা জেলা শাখা পরিদর্শক লাকিয়া খানম বলেন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ক্রেতা হওয়ায় দোকান একটু বেশি সময় খোলা রাখতে হয়। তবে মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন ব্যক্তির নিকট মদ বিক্রয় নিষিদ্ধ। এ সময় ক্রেতার নাম পরিবর্তন করে শিক্ষার্থী বা অন্য ব্যক্তির নিকট মদ বিক্রি, দাম বেশি নেয়া ও মদে পানি মেশানো বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অভিযান পরিচালনা করবো। এ ধরনের অনিয়ম পেলে দোকান মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে সোমবার (১৬ জুলাই) মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হাশেম আলীর সাথে যোগাযোগ করে দেশী মদ লিটার প্রতি সরকারি দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি গোপনীয়। সরকারের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে আমি এ বিষয়ে বলতে পারবো না। তবে অনিয়মের বিষয়গুলি তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)