গ্রেনেড হামলা মামলায় বাবরসহ ২০ জনের ফাঁসি, তারেকের যাবজ্জীবন

একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ২০ জনের ফাঁসি দিয়েছেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যন তারেক রহমানসহ ১৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।

বুধবার বেলা ১২টায় পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত অস্থায়ী আদালত দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন।

এ রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে ১৪ বছরের অপেক্ষার অবসান হলো।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বিষয়টি  নিশ্চিত করেছেন।

ওই ঘৃণ্য হামলার পর তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। আহত হয় পাঁচ শতাধিক।

খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ছাড়াও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই হরকাতুল জিহাদের নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক এবং পুলিশের শীর্ষ পদে থাকা বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এ মামলার প্রধান আসামি।

এই ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে তিন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায়, তাদের মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ওই তিনজন হলেন- জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল।

এখন ৪৯ আসামির বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জঙ্গি তাজউদ্দিনসহ ১৮ জন এখনো পলাতক।

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা: ঘটনার আদ্যোপান্ত​

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। দেশের ইতিহাসের এক ভয়াল দিন। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে তখন সমাবেশ চলছিল। ট্রাকের ওপর তৈরি একটি অস্থায়ী মঞ্চে তিনি বক্তব্য দিচ্ছিলেন। তার চারিদিকে ছিল দলীয় নেতাদের বেষ্টনী। সামনের দিকে ছিল ফটো সাংবাদিকরা। হঠাৎই তার বক্তব্যের প্রায় শেষ পর্যায়ে প্রচণ্ড শব্দে গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়। সে হামলায় প্রাণ হারিয়েছিল ২৪ জন।

বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলের ছবি তুলছিলেন ফটো সাংবাদিক জিয়াউল ইসলাম। তিনি বলেন, এমন নৃশংসতা কখনো হতে পারে আমার কল্পনাতেও ছিল না। আমি মঞ্চেই ছিলাম। চেয়ারে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। প্রচণ্ড হুড়োহুড়ি আর ধাক্কায় চেয়ার থেকে নিচে পড়ে যাই। আমার ওপরে পড়ে অনেকে। হঠাৎ ট্রাকের পাটাতনের ফাঁকে চোখে পড়ল আস্ত গ্রেনেড। সেটি বিস্ফোরিত হলে কি হতো ভাবলেই শিউরে উঠি এখনো।

হামলায় অল্পের জন্যে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

হামলায় অল্পের জন্যে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনা কয়েক হাত দূরে। তাকে ঘিরে মানববর্ম তৈরি করেছেন তার দলের নেতারা। গ্রেনেডের শব্দ শেষে শুরু হলো গুলির শব্দ। এক পর্যায়ে উঠে দাঁড়াই এবং গুলি থামলে ট্রাক থেকে নেমে আসি। নামার পর যা দেখি সেটি আরেক বিভীষিকা। চারদিকে আর্তনাদ, গোঙ্গানি। রক্তাক্ত পড়ে আছে বহু নারী পুরুষ। কে জীবিত কে মৃত বোঝা মুশকিল। নিজে বেঁচে আছি বুঝতে পেরে আবার ক্যামেরার শাটারে ক্লিক করতে আরম্ভ করি।

মামলা গ্রেনেড হামলার ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার এসআই ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলাটির প্রথমে তদন্ত শুরু করে থানা পুলিশ।

এরপরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ হয়ে তদন্তের দায়িত্ব যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হাতে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী আরো দুটি মামলা করেন। এ সব মামলা বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।

২২ আগস্ট: বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনকে চেয়ারম্যান করে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে সরকার। ওই কমিশন এক মাস ১০ দিনের মাথায় ওই বছরের ২ অক্টোবর সরকারের কাছে ১৬২ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

এভাবেই নেতাকর্মীরা ঘিরে রেখেছিলেন শেখ হাসিনাকে

এভাবেই নেতাকর্মীরা ঘিরে রেখেছিলেন শেখ হাসিনাকে

প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযানটি পরিচালনা করা হয়েছিল ভাড়া করা দুর্বৃত্তদের মাধ্যমে। এ সব লোক প্রধানত একটি সংগঠনের সশস্ত্র ক্যাডারদের মধ্য থেকে নেয়া হয়, যাদের সমাবেশে ভিড়ের মধ্যে মিশে যাওয়ার মতো ভালো জ্ঞান ছিল।

জজ মিয়া নাটক একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্তের এক আলোচিত অধ্যায় জজ মিয়া। ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগের একটি চায়ের দোকান থেকে আটক হন তিনি। আটকের পর তাকে নেয়া হয় সেনবাগ থানায়।

ঢাকা থেকে সিআইডির অনুরোধ পেয়ে সেনবাগ থানা পুলিশ জজ মিয়াকে গ্রেফতারের জন্য সোর্স নিয়োগ করে। পনেরো দিন সিআইডি পুলিশের হেফাজতে থাকার পর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর গ্রেনেড হামলার মামলায় তিনি ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি’ দেন বলে জানায় পুলিশ।

জজ মিয়ার বিষয়টি পুলিশের সাজানো ঘটনা এমন প্রতিবেদন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে চারিদিকে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। আসামি করার বদৌলতে তার পরিবারকে টাকা দেয়ার বিষয়টিও আলোচনায় ওঠে আসে।

পরে ২০০৮ সালে জজ মিয়াকে আসামির তালিকা থেকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র জমা দেয় সিআইডি। পরে আদালতও এ মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেন। ২০০৯ সালে মুক্তি পান জজ মিয়া।

গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঠিক আগ মূহুর্তে তোলা এই ছবি: ভাষণ দিচ্ছিলেন শেখ হাসিনা

গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঠিক আগ মূহুর্তে তোলা এই ছবি: ভাষণ দিচ্ছিলেন শেখ হাসিনা

প্রথম অভিযোগপত্র ২০০৮-এর জুনে তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১১ জুন মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির।

২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। পরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ।

কাহহার আকন্দ ২০১১ সালের ৩ জুলাই বিএনপি নেতা তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন।

২০০৪সালের ২১শে অগাস্ট, আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার পর সেখানে হতাহতরা পড়ে আছেন।

২০০৪সালের ২১শে অগাস্ট, আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার পর সেখানে হতাহতরা পড়ে আছেন।

৩ জুলাই ২০১১: সম্পূরক চার্জশিটে তারেক-বাবর গ্রেনেড হামলার ঘটনার মামলায় ২০১১ সালের ৩ জুলাই সম্পূরক চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। সেদিন বিশেষ নিরাপত্তার মধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা-সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ স্বাক্ষরিত চার্জশিটটি দাখিল করেন এসআই গোলাম মাওলা।

দুটি পৃথক ট্রাঙ্কে ভর্তি করে আনা চার্জশিটে নতুন করে ৩০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

সম্পূরক চার্জশীটে নাম এসেছে তারেক রহমানের, তিনি এখন লন্ডনে

সম্পূরক চার্জশীটে নাম এসেছে তারেক রহমানের, তিনি এখন লন্ডনে

এর আগের চার্জশিটে ২২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। অভিযুক্তদের তালিকায় নতুনভাবে যাদের যোগ করা হয় তাদের মধ্যে বিএনপি নেতা তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ উল্লেখযোগ্য।

জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও জেএমবি সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড অন্য মামলায় ইতোমধ্যেই কার্যকর হওয়ায় মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়।

এখন এ মামলার আসামির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯ জনে। এর মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। বাকি আসামিদের মধ্যে কারাগারে রয়েছেন ২৩ জন এবং জামিনে ছিলেন ৮ জন। জামিনে থাকা আট জনের জামিন বাতিল করে আদালত।

তারেক রহমানসহ বাকি ৪৮ আসামি হলেন-

১. সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর

২. সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু

৩. তৎকালীন ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন

৪. মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী

৫. তৎকালীন এনএসআই মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিম

৬. জঙ্গি শাহদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল

৭. মাওলানা শেখ আবদুস সালাম

৮. মো. আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে মো. ইউসুফ ভাট

৯. আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম

১০. মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু উমর আবু হোমাইরা ওরফে পীর সাহেব

১১. মাওলানা সাব্বির আহমদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির

১২. মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ

১৩. মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে ওভি

১৪. মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর

১৫. আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল

১৬. মো. জাহাঙ্গীর আলম

১৭. হাফেজ মাওলানা আবু তাহের

১৮. হোসাইন আহমেদ তামিম

১৯. মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জানদাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ

২০. আরিফ হাসান ওরফে সুজন ওরফে আবদুর রাজ্জাক

২১. মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ

২২. মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন

২৩. হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া ও আবু বক ওরফে হাফে সেলিম হাওলাদার

২৪. লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক

২৫. সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা

২৬. সাবেক আইজিপি শহুদুল হক

২৭. সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী

২৮. তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন

২৯. সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান

৩০. এএসপি আবদুর রশীদ

৩১. সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম

৩২. হারিছ চৌধুরী

৩৩. মাওলানা মো. তাজউদ্দীন

৩৪. মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন

৩৫. আনিসুল মোরসালিম ওরফে মোরসালিন

৩৬. মো. খলিল

৩৭. জাহাঙ্গীর আলম বদর ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর

৩৮. মো. ইকবাল

৩৯. লিটন ওরফে মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের,

৪০. কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ

৪১. মো. হানিফ,

৪২. মুফতি আবদুল হাই,

৪৩. রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবু

৪৪. লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার

৪৫. মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন

৪৬. ডিআইজি খান সাঈদ হাসান (সাবেক ডিসি পূর্ব)

৪৭. পুলিশ সুপার মো. ওবায়দুর রহমান খান

৪৮. মুফতি শফিকুর রহমান

‘তারেক-বাবর ও পাকিস্তানিদ জঙ্গি’ মামলা চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বারবার বলেছেন যে, তারা মনে করেন ওই হামলার উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা ও আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করা।

আইনজীবীরা আদালতকে জানান, ওই হামলার আগে ঢাকায় ১০টি বৈঠক হয়। এ সব বৈঠকে তারেক রহমান, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, হারিছ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। টাকা ও গ্রেনেড আসে পাকিস্তান থেকে।

পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের আবদুল মজিদ বাট এই কাজে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল। বাংলাদেশে হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের সদস্যরা।

২০০৭ সালে তৎকালীন সরকারের আমলে মামলাটি নতুন করে তদন্ত শুরু হলে অনেক নতুন তথ্য প্রকাশ পায়।

এর ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সম্পূরক চার্জশিটে তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আরো অনেকের নাম আসে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালতে এসব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করা হয়।

যদিও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা মনে করেন মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

সাত বছরে ৬ তদন্ত কর্মকর্তা গ্রেনেড হামলার পর পৃথক তিনটি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে প্রথম সাত বছরের মধ্যেই তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয় মোট ছয়বার। প্রথম তদন্ত হয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে। সে সময় কোনো প্রতিবেদন দাখিল হয়নি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নতুন তদন্তে সিআইডির এএসপি ফজলুল কবীর ২০০৮ সালের ১১ জুন অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই অভিযোগ পত্রে মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করা হলেও গ্রেনেডের উৎস ও মদদদাতাদের সনাক্ত করা হয়নি। বর্তমান সরকার আমলে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর আদালত মামলার বর্ধিত তদন্তের আদেশ দেন।

১৩ দফা সময় বাড়িয়ে ২০১১ সালের ৩ জুলাই সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেয়ার মধ্য দিয়ে গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্ত শেষ হয়।

২০১২ সালের ২৮ মার্চ: মামলার বিচার শুরু একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ৫২ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচার কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের ২৮ মার্চ বুধবার।

বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এই মামলায় ওই বছর ৯ এপ্রিল পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়। এর আগে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার শুরু হয়েছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে বিশেষ ট্রাইবুনালে।

আলোচিত এ মামলায় ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। আরো ২০ জনের সাফাই সাক্ষ্য নেয়া হয়।

ঘটনার পরের দিন শেখ হাসিনা যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন, তখনও তিনি হত-বিহ্বল

ঘটনার পরের দিন শেখ হাসিনা যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন, তখনও তিনি হত-বিহ্বল

বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার কারণ কী? মামলার দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে পরস্পরকে দায়ী করেছেন রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা মামলা দুটি পাঁচবার উচ্চ আদালতে নিয়ে যাওয়ায় আদালতের ২৯২ কার্যদিবস ব্যয় হয়। এছাড়া আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে কালক্ষেপণ করেছেন বলেও রেজাউরের অভিযোগ। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন বিএনপির সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদিন মেজবাহ।

মেজবাহ বলেন, এই মামলায় শুরুতে ৬১ জনের সাক্ষ্য নেয়ার পর অধিকতর তদন্তের আবেদন করা হয়। দ্বিতীয় রিপোর্ট আসা পর্যন্ত কয়েক বছর পেরিয়ে যায়। এছাড়া প্রত্যেক আসামির পক্ষে আলাদা আলাদা আইনজীবী জেরা করছেন। রাষ্ট্রপক্ষ ২২৫ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। এটা অবশ্যই সময়সাপেক্ষ। সবই হয়েছে আইনানুগ প্রক্রিয়ায়। কোনো কিছু সংক্ষিপ্ত করার কোনো সুযোগ নেই।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)