কে হবে ২০১৮ বিশ্বকাপ জয়ী দল? ইতিহাস কি বলে?- বিশ্লেষণ

৩২টি দেশ, ১টি ট্রফি
ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপে ৩২ টি দেশ অংশ নেয়, কিন্তু বিজয়ীর জন্য ট্রফি একটিই। তাই বলে দেয়া খুব কঠিন কে ঘরে তুলবে বিশ্বকাপ! অংশ নেয়া প্রতিটা দেশই অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা পার করে এসেছে এই আসরে। কেউ কাউকে ছাড় দেয়ার পাত্র নয়। তবুও ১৫ জুলাই রাশিয়ার মস্কোতে একটি দলের হাতে উঠবে বিশ্বকাপ। কিন্তু কার হাতে উঠবে বিশ্বকাপ তা এখনই বলতে পারবে না কেউ। তবে ইতিহাস ঘেটে ভবিষ্যতবাণী করাই যায়।

ইতিহাসের পূর্ববর্তী আসর গুলোতে বিজয়ী দলগুলোকে বিশ্লেষণ করলে হালকা ধারনা পাওয়া যায় কি হতে যাচ্ছে ২০১৮ এ মস্কোতে।

ইতিহাস বলে র‍্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকা দল কাপের দৌড়ে এগিয়ে থাকে
৩২ দেশের অংশগ্রহণে প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয় ১৯৯৮ সাল থেকে। তখন থেকে যতগুলো দেশে বিশ্বকাপ জয় করছে তাদের বেশিরভাগেরই ফিফা র‍্যাংকিং এ অবস্থান উপরের দিকে অনেকক্ষেত্রে প্রথম। যেমন ২০০৬ এর জার্মানী বিশ্বকাপ জয়ী দল ছিল ইতালী। তাদের র‍্যাংকিং ছিল ১।

২০০২ এ কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপে কাপ জিতে ব্রাজিল। তাদেরও ফিফা র‍্যাংকিং এ অবস্থান ছিল প্রথম। একমাত্র ১৯৮৬ এর বিশ্বকাপে র‍্যাংকিং এ পিছিয়ে থেকে ও কাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। দিয়াগো ম্যারাডোনার হাতে তখন উঠেছিল বিশ্বকাপের ট্রফি। আর্জেন্টিনাকে শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিল দিয়েগো ম্যারাডোনা আর তার `ঈশ্বরের হাত দিয়ে` করা গোল। এভাবে র‍্যাংকিং এর বিচারে কাটাছেড়া করে ২৪টি দলকে বাদ দিয়ে ৮টি দল পাওয়া যায়।

পিছিয়ে পড়ে স্বাগতিক দেশ
গত ৪৪ বছর ধরে এমন দেশেই বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হচ্ছে যেগুলো ফিফা র‍্যাংকিংয়ে সেরা দলের তালিকায় রয়েছে। একারণে বাড়তি সুবিধা পেয়ে গেল রাশিয়া। বিশ্ব ফুটবলে তাদের র‍্যাংকিং ৬৬, তাই তারা সেরা আটের ভেতরে থাকতো না, যদি তারা স্বাগতিক দেশ না হতো।

বিশ্বকাপের প্রথম ১১টি আসরের দিকে তাকালে দেখা যায় যে একটা সময় ছিল যখন স্বাগতিকরা চ্যাম্পিয়ন হত। ১৯৩০ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত মোট ১১ টি আসরের পাঁচটি আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্বাগতিক দেশগুলো। কিন্তু এখন মানে পরের নয়টি আসরের মাত্র একটিতে স্বাগতিক দেশ কাপ পেয়েছে। ১৯৯৮ এর বিশ্বকাপের ফ্রান্স। তার অর্থ হলো স্বাগতিক দেশ হওয়া এখন আর সাফল্যে পৌঁছানোর রাস্তা বা চাবিকাঠি নয়।

যেমন চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া অথবা দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯৯০ সালে স্বাগতিক দেশ হয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি ইতালি, ২০০৬ সালে স্বাগতিক দেশ ছিল জার্মানি, কিন্তু সেবারেও শিরোপা তাদের ঘরে উঠেনি। চার বছর আগে বিশ্বকাপ হয়েছিল ব্রাজিলে, সেবারও দেশটি চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি।

ফলে সেই হিসাবে রাশিয়া বাদ পড়ে যায়। বাকি থাকে সাতটি দেশ।

কম গোল খাওয়া দলগুলোর হাতে যাবে বিশ্বকাপ
১৯৯৮ সাল থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়া পাঁচটি দেশের কেউই তাদের সাতটি ম্যাচে চারটির বেশি গোল খায়নি।

এখন তালিকায় যেই ৭টি দেশ রয়েছে তাদের বাছাই পর্বের ম্যাচগুলো দেখলে বোঝা যায় পোল্যান্ডের রক্ষণভাগ সবচেয়ে দুর্বল। প্রতি ম্যাচে তারা ১ দশমিক ৪টি করে গোল হজম করেছে।

জার্মানি ও পর্তুগাল খেয়েছে প্রতি ম্যাচে শূন্য দশমিক ৪ গোল, বেলজিয়াম ও ফ্রান্স শূন্য দশমিক ৬, ব্রাজিল শূন্য দশমিক ৬১ এবং আর্জেন্টিনা শূন্য দশমিক ৮৮ গোল।

ফলে পোল্যান্ড বাদ পড়ে যায় তালিকা থেকে। বাকি রইলো ছ`টি দেশ।

এগিয়ে থাকবে ইউরোপীয় দেশগুলো
শুরু থেকেই বিশ্বকাপ জয়ী দেশগুলো হয় ইউরোপীয় নয় দক্ষিণ আমেরিকার। খুব বেশি দিন আগেও ইউরোপে এসে ল্যাতিন দেশ কিংবা ল্যাতিন এ এসে ইউরোপের কোন দল বিশ্বকাপে বিজয়ী হতে পারেনি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকাতে স্পেনের সাফল্য এবং ব্রাজিলে জার্মানির জয় গতিপথ বদলে দিয়েছে।

ইউরোপে আয়োজিত আসরগুলোতে বেশির ভাগ সময়ই জয়ী হয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলোই। এরকম ১০টি বিশ্বকাপে মাত্র একবার ইউরোপের বাইরের কোন দেশ শিরোপা জিতেছিল। কিন্তু সেজন্যে আপনাকে ফিরে যেতে হবে দূর অতীতে- ১৯৫৮ সালে সুইডেনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল ব্রাজিল।

ফলে তালিকা থেকে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো বাদ দিলে তালিকা হয়ে যায় চারটি দেশের। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানি এবং পর্তুগাল।

কাপ জিততে লাগবে সেরা গোলকিপার
আমরা ভাবি হয়ত গোলদাতারাই বিশ্বকাপ জিতিয়ে দেয়। কিন্তু ১৯৮২ সালের পর থেকে মাত্র দু`বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দলের কোন খেলোয়াড় সেরা গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন বুট পেয়েছেন। ২০০২ সালে ব্রাজিলের রোনাল্ডো এবং ২০১০ সালে স্পেনের ডাভিড ভিয়া। বাকি সব আসরেই দেখা গেছে বিশ্বকাপে জয়ী হওয়াটা অনেক বেশি নির্ভর করে গোলরক্ষকের পারফর্মেন্সের উপর।

গত পাঁচটি আসরের চারটিতেই সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার গোল্ডেন গ্লাভ পেয়েছেন চ্যাম্পিয়ন হওয়া দল থেকেই। তালিকায় বাকি যে চারটি দেশ আছে তাদের মধ্যে বর্তমানের সেরা গোলরক্ষকরা হচ্ছেন জার্মানির মানুয়েল নয়ার, ফ্রান্সের উগো লরিস এবং বেলজিয়ামের থিবাত কোর্তোয়া। এই হিসেবে বাদ পড়ে যাচ্ছে পর্তুগাল।

বাকি থাকে ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও জার্মানি- এই তিনটি দেশ।

অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকা দল
১৯৯৮ সাল থেকে দেখা গেছে বিশ্বকাপ জিততে অভিজ্ঞতা সব থেকে বড় ব্যাপার। সেবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া ফরাসী দলের প্রত্যেকটি খেলোয়াড়ের অভিজ্ঞতা ছিল গড়ে ২২.৭৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার। চার বছর আগে জার্মানি যখন চ্যাম্পিয়ন হলো তখন তাদের খেলোয়াড়দের প্রত্যেকের গড়ে ৪২.২১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল। ২০০২ সালে ব্রাজিলের ফুটবলারদের এই গড় ছিল ২৮.০৪। ইটালির ২০০৬ সালে ছিল ৩২.৯১ এবং ২০১০ সালে স্পেনের এই হার ছিল ৩৮.৩০।

এখন তালিকায় অবশিষ্ট থাকা তিনটি দেশের মধ্যে ফ্রান্সের খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতা সবচেয়ে কম। তাদের একেকজন ফুটবলার গড়ে ২৪.৫৬টি করে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে। জার্মানির ৪৩.২৬ এবং সবচেয়ে বেশি বেলজিয়ামের- ৪৫.১৩।

ফলে ফাইনাল হতে যাচ্ছে বেলজিয়াম ও জার্মানির। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হওয়া যাবে না

বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা পিছিয়ে থাকবে কাপের দৌড়ে
বিশ্বকাপে জয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা খুব কঠিন। একমাত্র ব্রাজিলই পেরেছিল ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে পরপর দু`বার বিশ্বকাপ জিততে। গত চারটি আসরের তিনটিতেই আগের বারের চ্যাম্পিয়ন গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ে গেছে। সাম্প্রতিক বিশ্বকাপগুলোতে জার্মানির পারফরমেন্স দারুণ। গত ন`টি টুর্নামেন্টে (পশ্চিম জার্মানি তিনবারসহ) তারা দু`বার জিতেছে। আরো তিনটি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে। এবং আরো দুটো বিশ্বকাপে হয়েছে তৃতীয়। তবে, যখন রাশিয়াতে আবার বিশ্বকাপ জয়ের প্রসঙ্গ আসে তখন ইতিহাস জার্মানির বিপক্ষে উঁকি দেয়।

ফলে, বুঝতেই পারছেন কারা চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে ২০১৮ বিশ্বকাপ ফুটবলে- বেলজিয়াম।

যদি না অন্য কেউ শিরোপা ছিনিয়ে না নেয়। আর খেলাটা যখন ফুটবল লড়াই তখন অনেক বেশি। হরহামেশা অঘটন ঘটে ফুটবলে। তাই শেষ হাসিটা কাদের হয় দেখার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)