কিছুই জানেনা প্রশাসন! শ্যামনগরের নকিপুরে মেলার নামে চলছে জুয়া।

দৈনিক সাতক্ষীরা অনলাইন পত্রিকাসহ একাধিক স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করার পরও বন্ধ হয়নি শ্যামনগরের নকিপুর জমিদার বাড়ির মাঠের ঈদ আনন্দ মেলার নামে রমরমা জুয়া আসর। সংবাদ প্রকাশের পর আরো জোর দিয়ে চালানো হচ্ছে ‘দৈনিক উলাস’ লাকী কুপন, সার্কাস। তবে এ ব্যাপারে কিছুই জানেননা বলে জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

স্থানীয়রা জানান, গতকাল লাকী কুপনের পুরস্কার ছিল ২টা মটর সাইকেল। আজ প্রাইজ হিসেবে দেওয়া হচ্ছে ৩ টা মটর সাইকেল। লাকী কুপন ও সার্কাস বন্ধ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে স্থানীয়রা বলেন, ‘বন্ধ হবে কী করে? উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানা নির্বাহী অফিসারকে ম্যানেজ করে এগুলো চালানো হচ্ছে। যারা বন্ধ করবেন তারা যদি ম্যানেজ হয়ে যান তবে ওগুলো বন্ধ করবেন কারা?’

এদিকে গতকাল(২জুলাই) শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান বলেছিলেন, ‘ডিসি অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে মেলা করা হচ্ছে। তবে সেখানে লটারি, কুপন বা জুয়ার কোন অনুমোদন নেই।’

এছাড়া শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মান্নান আলী বলেছিলেন, ‘অনুমতি নিয়ে মেলার আয়োজন করেছে মেলা কর্তৃপক্ষ তবে মেলার অভ্যন্তরে র‌্যাফেল ড্র/ লাকী কুপন হচ্ছে কি না তা আমার জানা নেই।’

তবে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর আজও(৩ জুলাই) তাদের সাথে কথা হলে তারা একই সুরে বলেন, অনুমতি নিয়ে মেলা হচ্ছে তবে মেলাকে কেন্দ্র করে লাকী কুপন/জুয়া হচ্ছে কি না তা আমাদের জানা নেই।

এদিকে স্থানীয় সুধী মহল অভিযোগ করে বলেছেন, একটি উপজেলার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইউএনও ও ওসি। তাদের নলেজের বাইরে লাকী কুপনের মতো জুয়ার আসর পরিচালনা করা সম্ভব না। তাদের বুকের মধ্যেই প্রত্যেকদিন শ্যামনগরের প্রত্যেকটি রাস্তায় ইজিবাইক নিয়ে মাইকে প্রচার দিয়ে কুপনের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এরপরও যদি ইউএনও ও ওসি বিষয়টি জেনেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন তবে জনগনের বসেবসে আঙুল চোষা ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা!

তবে মেলায় কোন প্রকার জুয়া বা লটারী হবেনা জানিয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ ইফতেখার হোসেন গতকাল(২জুলাই) বলেছিলেন, ‘শ্যামনগরের নকিপুরে মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তবে আজ অবধি সেটি শেষ হয়ে যাওয়া কথা। নির্দিষ্ট সময়ের পরে মেলা করা যাবে না। এছাড়া যখন মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তখন কোন লটারি বা জুয়ার অনুমতি দেওয়া হয় নি। সাতক্ষীরার এ সকল কর্মকান্ড করার কোন সুযোগ নেই। এরকম ঘটনা ঘটলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

রোববার(০১ জুলাই) হতে শুরু হয়েছে স্কুল, মাদ্রাসার অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। তবে পরীক্ষা শুরুর আগেই শ্যামনগরের নকিপুর জমিদার বাড়ির মাঠে শুরু হয়েছে মাস ব্যাপী ঈদ আনন্দ মেলার নামে রমরমা জুয়া আসর। মেলার আড়ালে সেখানে চলছে সার্কাস। মানুষকে নিঃস্ব করতে শুরু করা হয়েছে ‘দৈনিক উলাস’ লাকী কুপন। প্রতিদিন সকাল হতে গভীর রাত পর্যন্ত শত ইজবাইক নিয়ে কর্মচারীরা চলে যাচ্ছেন বিভিন্ন প্রান্তে। ইজি বাইকের পিছনে প্রাইভেটকার, ইজিবাইক, টিভি, গরু, মটরসাইকেল ছবি দিয়ে টানানো হয়েছে রকমারি ব্যানার। ব্যানারের নিচে লেখা রয়েছে ‘আয়োজনেঃ শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাব’ মাইকের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিটা টিকিটের মুল্য ২০ টাকা প্রচার দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে লটারির কুপন।

এ ব্যাপারে শ্যামনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি আকবর কবির গতকাল বলেছিলেন, প্রেসক্লাবের উন্নয়নের জন্য প্রেসক্লাবের ব্যানারে কুপনের আয়োজন করা হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানতো তাদের প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য মাঝে মাঝে এমন কিছুর আয়োজন করে থাকে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)