কাশেম স্যার খারাপ খারাপ কথা বলে তা বলা যাবেনা ।। ক্ষুব্ধ তালার অভিভাবকরা

তালার খলিলনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আবুল কাশেম সরদারের বিরুদ্ধে এবার উঠতি বয়সের ছাত্রীদের গায়ে অযাচিত হাত দেয়া, ছাত্রীদের বেগম বলে সম্বোধন করা ও ক্লাস ফাকি দিয়ে স্কুলে ঘুমানোর অভিযোগ উঠেছে। এর আগেও শিক্ষকের বিরুদ্ধে এধরনের নানান অভিযোগ ওঠে এবং গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। সে সময় উক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবীতে অভিভাবকরা বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কর্তৃপক্ষ শিক্ষক আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের অভিভাবক সহ সচেতন মহল। অনতিবিলম্বে বিতর্কিত শিক্ষক আবুল কাশেমকে উক্ত স্কুল থেকে প্রত্যাহার না করলে আন্দোলন করা হবে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
জানাগেছে, মো. আবুল কাশেম সরদার তালার ৭৮ নং খলিলনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, তিনি বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির উঠতি বয়সের ছাত্রীদের শরীরে বিভিন্ন অযুহাতে হাত দিয়ে যৌন হয়রানী করে। বিষয়টি ব্যাপক জানাজানি হওয়ায় ফুঁসে উঠেছেন অভিভাবক এবং বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নেতৃবৃন্দ।
রোববার দুপুরে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে যেয়ে দেখা যায়, শিক্ষক আবুল কাশেম অফিস সংলগ্নের একটি রুমে ঘুমচ্ছেন। এসময় ন্যাশনাল সার্ভিস’র এক শিক্ষিকার মাধ্যমে সাংবাদিকদের আগমন জানতে পেরে তিনি তড়িঘড়ি উঠে অফিস রুমে আসেন।
অভিযোগরে বিষয়ে ৫ম শ্রেণির ২জন ছাত্রী জানান, কাশেম স্যার ক্লাসে এসে তাদেরকে “বেগম” বলে সম্বোধন করে। এতে প্রতিবাদ করলেই স্যার হাত দিয়ে মারপিট করে। তাছাড়া ক্লাসের মধ্যে তিনি গান গাইতে বলেন, না গাইলেই গায়ে হাত তোলেন। উঠতি বয়সের এক ছাত্রী জানালেন, ক্লাসে এসে কাশেম স্যার খারাপ খারাপ কথা বলে, যা বলা যাবেনা। এতে প্রতিবাদ করলে স্যার গালে চিমটি দেয়, মুখে খারাপ ভাবে টিপে ধরে এবং হাতের উপরের অংশে ঘুষি মারে।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, ছাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসকে জানানো হয়েছে। এছাড়া কাশেম স্যারকে এসব আচরণ বন্ধ করার জন্য বলা হলেও তিনি তা মানেন না এবং উল্টো নানান হুমকি দেন। তাছাড়া প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ অমান্য করে প্রায় সময় তিনি ক্লাস ফাঁকি দেন বলে জানান শিক্ষকরা।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য গোলদার মিজানুর রহমান বলেন, কাশেম স্যারের বিরুদ্ধে উঠতি বয়সের ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক আচরণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাছাড়া ক্লাস ফাঁকি সহ আরো বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে শনিবার বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভা করা হয়। সেখানে, বিদ্যালয় থেকে কাশেম স্যারকে প্রত্যাহার করার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসে রেজুলেশন করে পাঠানোর প্রস্তাব ওঠে। তিনি বলেন, একজন শিক্ষক হয়ে উঠতি বয়সের ছাত্রীদের সাথে অশ্লীল আচরণ এবং তাদের গায়ে হাত দেয়াটা কোনও ভাবে মেনে নেয়া যায়না। এবিষয়ে আওয়ামীলীগ নেতা জামাল মোড়ল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষকের কাছ থেকে এধরনের আচরণ গ্রহণযোগ্য না।
স্থানীয় যুবলীগ নেতা আব্দুর রহমান বলেন, শিক্ষক আবুল কাশেম এর বিরদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানী করা সহ বিদ্যালয়ে ক্লাস ফাঁকি দেবার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। যে কারণে অনতিবিলম্বে অত্র স্কুল থেকে তাকে প্রত্যাহার না করলে আন্দোলন করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, শিক্ষক আবুল কাশেম এর বিরুদ্ধে নারী ঘটিত অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও ক্লাস ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন রুটিন মাফিক ঘুমানো এবং ছাত্রীদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়া সহ নানান অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করা হলেও তাকে এখান থেকে বদলি করা হয়নি। তাকে অবিলম্বে বদলি করা না হলে সন্তানকে অন্য স্কুলে নিয়ে যাবো।
এব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আবুল কাশেম বলেন, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনা সার্বিক মেনে চলে আমি বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস নিই, তবে শারীরিক অসুস্থতার জন্য অফ পিরিয়ডে মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিই। বিদ্যালয়ের সকল ছাত্রীদের “বেগম” বলে সম্বোধন করার কথা স্বীকার করে তিনি আরো বলেন, আমি কোনও ছাত্রীদের সাথে অশ্লীল আচরণ করিনা বা তাদের গায়ে হাত দিইনি। তবে আদর হিসেবে ছোট ছোট বাচ্চাদের মুখে বা গায়ে হাত দিই।
এবিষয়ে তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. অহিদুল ইসলাম জানান, শিক্ষক আবুল কাশেম এর বিরুদ্ধে এইধরনের অভিযোগ পূর্বেও উঠেছিল। সেসময় অত্র দপ্তরের উদ্যোগে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা পায়। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে দাপ্তরিক ভাবে অবহিত করলে সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মহোদয় আবুল কাশেম এর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করেছেন। তিনি আরো বলেন, উঠতি বয়সের ছাত্রীদের যৌন হয়রানী করার যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করা হবে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

##

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)