কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ‘যাতা’

কালের আবর্তনে বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ‘যাতা’। কিছু বছর আগেও গ্রামের গৃহবধূরা যাতা দিয়ে চাল ও গম থেকে চালের গুঁড়া ও আটা-ময়দা তৈরি করতো। এছাড়া যাতা দিয়ে ভাঙানো হতো মুসুরী, খেসারী, মাশ কলাইসহ প্রভৃতি রকমের ডাল। বর্তমানে আধুনিকতার ছোয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে যাতা কল।
পাথরের তৈরি যাতা, খুবই মসৃণ দুই খ- পাথর কেটে গোল করে তৈরি করা হতো। সেই খন্ড দুটির ভেতরের ভাগকে লোহার তৈরি বিশেষ বাটাল বা যন্ত্র দ্বারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চটলা করে এর ধার বাড়ানো হয়। যাতার উপরের এবং নিচের অংশের মাঝ বরাবর একটি ছিদ্র করা হয়। সেই ছিদ্রের মাঝে কাঠ বা বাঁশ দ্বারা তৈরি একটি হাতল লাগানো হয় যা দুই পাটকে এক জায়গায় রাখতে সাহায্য করে।
দুই ছিদ্রের মাঝে বিশেষ খাঁজ কাটা দ- থাকে যার সাহায্যে পাট দুটির মাঝে কতটুকু ফাঁক থাকবে তা নির্ধারণ করা হয়। শুধু উপরের পাটে আর একটি ছিদ্র করা হয় যা দিয়ে শস্যকে ভিতরে পাঠানো হয় পিষার জন্য। গৃহবধূরা মাঝের ছিদ্র হাতল ধরে আরেকটি ছিদ্র দিয়ে শস্য ভিতরে দিয়ে হাতল ধরে জোরে ঘুরাতে থাকে। এতে শুধু উপরের পাট নিচের পাটের উপর ঘুরতে থাকে এবং দুই পাটের ঘর্ষণের ফলে উপর হতে দেওয়া শস্য ভেঙে গুঁড়া হয়ে দুই পাটের চার পাশের ফাঁক দিয়ে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে আসে। অনেক সময় ডাল ভালোভাবে গুঁড়া হয় না। ফলে সেগুলিকে পুনরায় ভিতরে দিয়ে যাতা ঘুরিয়ে ভালো করে গুঁড়া করা হয়। দুই পাটের মাঝে থাকা খাঁজ কাটা দ-ের মাধ্যমে দু’পাটের ফাঁক কম বেশি করে শস্যের আটা বা ডালের গুঁড়া কেমন হবে তা নির্ধারণ করা হয়।
যাতা পাথরের তৈরি হওয়ায় কাজ চলাকালীন সময়ে যাতা থেকে এক ধরনের মিষ্টি শব্দ শোনা যেতো। কিন্তু বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের কোথাও যাতার ব্যবহার তেমন আর চোখে পড়ে না।
উন্নত মানের মেশিন তৈরি হওয়ার কারণে কেউ আর যাতা চালাতে চায় না। কিন্তু তারপরও সদর উপজেলার বল্লীর গ্রামাঞ্চলের অনেক পরিবার যাতাকে ঐতিহ্য হিসাবে ধরে রাখতে চেষ্টা করছেন। বল্লীর ৬নং ওয়ার্ড নারায়নপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুল হাই মোড়লের বাড়িতে আজও যাতার ব্যবহার দেখা যায়। এছাড়াও একই এলাকার মো. রবিউল ইসলাম গাজীর বাড়িতেও যাতা রয়েছে। যদিও তা আর ব্যবহার হয় না। হয়ত আর কিছু দিন পর এ যাতা কালের আবর্তনে হারিয়ে যাবে।

আশাশুনির থানার বড়দাল গ্রামের শিক্ষক সত্যজিত মন্ডল এই প্রতিবেদকে বলেন , আধুনিকতার যান্ত্রিকের কবলে পড়ে হারিয়ে গেয়ে গ্রামের অনেক ঐতিহ্য । আর এর মধ্যে অন্যতম হলো যাতা ।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) সাকলাইন মোস্তাক বলেন,আধুনিকতার ছোয়ায় যাতা শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে ।আধুনিক কালে মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে অনেক কাজ করতে চাই ।
তিনি আরও বলেন যাতা ব্যবহারে যে চাল ডাল ভাঙা হতো তা অনেক পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত । সেকারণে পুষ্টির দিকে লক্ষ করলে বুঝাযায় যাতা ভাঙা দ্রব্য ব্যবহার করলে রোগ বালাই কম হয় ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)