কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির ১৯ আগস্ট ৪র্থ মৃত্যু বার্ষিকী
সমাজে যে সব সমাজসেবী, রাজনৈতিক ব্যক্তি সফল ভাবে কাজ করতে পারেন তারাই কৃতিত্বের অধিকারী ও প্রশংসার দাবিদার। জনকল্যাণ মূলক বিশেষ করে শিক্ষা বিস্তারের অধ্যক্ষ তমিজ উদ্দীন আহম্মাদের কাজের দীর্ঘ তালিকা দেখে স্পষ্ট যে, সাধারণ মানুষের অনুভূতির প্রয়োজন উপলব্ধি করেই তিনি শিক্ষা বিস্তারের মনোনিবেশ করেছিলেন। অধ্যক্ষ তমিজউদ্দীনের সৌম্যকান্তি, মার্জিত আচরণ,সদা প্রফুল্ল হাস্যময় মুখশ্রী এখনও কালিগঞ্জ বাসির মনে নাড়া দেয়। ১৯৪৭ সালের ১লা জানুয়ারি শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের দীনমুজুর মোঃ ইসমাইল হোসেন ও গৃহিনী মতি বিবির ঔরসে জন্মগ্রহণ করেন। ৬ ভাই ও ৩ বোনের মাঝে তিনি “ন”। গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তালপাতায় লেখার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন তিনি। ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে নওয়াবেঁকি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ভ্রুলিয়া হাইস্কুলে এস,এস,সি পাশ এবং সাতক্ষীরা কলেজ থেকে এইচ,এস,সি পাশ করে উচ্চতর শিক্ষার জন্য চিটাগাং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স মাস্টার্স পাশ করে আশাশুনি কলেজে চাকুরীতে যোগদান। পরবর্তিতে ১৯৭২ সালে কালিগঞ্জ কলেজে বাংলা বিভাগে অধ্যাপক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেই থেকে শুরু সমাজসেবা ও নতুন কিছু সৃষ্টির। অধ্যক্ষ তমিজউদ্দীন মনে করেন প্রাথমিক শিক্ষা সারা জীবনের শিক্ষার ভীত। তাই তিনি শিশুদের জন্য তৈরি করেন “লিটল ফ্লাওয়ার কিন্ডার গার্টেন” যেখানে নিজে প্রিন্সিপাল হয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। প্রবর্তিতে ল্যারেটরী স্কুল নামে পরিচিতি পায়। নারী শিক্ষা বিস্তারের জন্য সাবেক বস্ত্রমন্ত্রী, কালিগঞ্জের কৃতি সন্তান মনসুর আলীর সাথে পরামর্শ করে রোকেয়া মনছুর মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসাবে ১৯৯২ সালে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন। বর্তমানে রোকেয়া মনছুর ডিগ্রী মহিলা কলেজ সু-প্রতিষ্ঠিত। মনছুর আলীর সহযোগিতায় হাজী তফিল উদ্দীন মহিলা দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতা করেন। আশাশুনি প্রতাপনগর আইডিয়াল কলেজ, ন’বেঁকি আটুলিয়াই নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মুন্সীগঞ্জ কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। কালিগঞ্জ উপজেলায় সাংবাদিক জগতের প্রতিকৃতি সাংবাদিক,অধ্যক্ষ তমিজউদ্দীন আহমেদ। সংবাদ পত্র, সাংবাদিকতা কি তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন। কালিগঞ্জ প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠা সভাপতি ও মাসিক ফরিয়াদ ও সাপ্তাহিক মুক্ত আলাপ পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে সততা,নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট তিনি নীলডুমুর বিজিবি ক্যাম্পে একটি মত বিনিময় সভায় চমৎকার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। যা তমিজ উদ্দীনের জীবনের শেষ বক্তব্য ছিলো। ১৫ আগস্ট কালিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস অনুষ্ঠানে রচনা প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে হার্ডএ্যাটার্ক হন। সাতক্ষীরায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ আগস্ট সকলকে কাঁদিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মৃত্যু কালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্র, ২ কন্যা সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। অধ্যক্ষ তমিজউদ্দীনের স্বপ্ন ছিলো কালিগঞ্জে একটি বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার, কিন্তু সেটা অধরা রয়ে গেলো।