কলারোয়ায় জমে উঠেছে খেঁজুরের গুড় ও পাটালির হাট

কামরুল হাসান,কলারোয়া:
শীতের তীব্রতার সাথে সাথে কলারোয়ায় খেঁজুর গাছের গাছিদের গুড় ও পাটালি তৈরির ব্যস্ততা বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। এ মওসুমে খেঁজুর রস থেকে গুড় তৈরি করা পর্যন্ত বেশ ব্যস্ত সময় পার করে থাকেন গ্রামীণ জনপদের চিরচেনা এ মানুষগুলো। গ্রাম্য  গাছিরা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি উপার্জনের জন্য বাজারে তোলে রস থেকে তৈরি খেঁজুরের গুড় ও গুড় থেকে তৈরিকৃত সু-স্বাদু পাটালি। আর সেই খেঁজুরের গুড় বা পাটালি বেচাকেনার অন্যতম হাট তৈরি হয়েছে কলারোয়ার দেয়াড়া ইউনিয়নের খোরদো বাজারে। শুধু তাই নয়, এই হাট থেকে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে খেঁজুর গুড় বা পাটালি চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভাগীয় শহরে। খোরদো বাজারের খোরদো-চাকলা ব্রিজ সংলগ্ন গুড়ের হাট সপ্তাহে দু’দিন বৃহস্পতিবার ও রবিবার বসে। কপোতাক্ষের কূল ঘেষে খোরদো বাজার ব্রিজের মুখ সংলগ্ন রাস্তার ধারে এ হাট সত্যি চোখে পড়ার মতো। শীত মৌসুমে কলারোয়া উপজেলার অন্যতম প্রধান এ খেঁজুর গুড়ের হাট বেশ জমজমাট হয়ে থাকে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন-কলারোয়ার খেঁজুর গুড়ের রয়েছে আলাদা নাম জস। উপজেলার খোরদো বাজারে খেঁজুর গুড় ও পাটালির হাটে গুড় ও পাটালি বিক্রি করতে আসেন পার্শ্ববর্তী যশোর জেলার মনিরামপুর ও কলারোয়া উপজেলার প্রত্যন্ত অ লের প্রায় ৫০/৬০ গ্রামের খেঁজুর গাছের গাছিরা। গুড় বিক্রি করতে আসা দেয়াড়া গ্রামের নাসির উদ্দিন নামের খেঁজুর গাছি জানান-এখনতো আগের মতো গাছ নেই। বিলুপ্তির পথে খেঁজুর গাছ। তাই রস এখন কম সংগ্রহ করা হয়, যা সংগ্রহ করতে পারি তাতে খরচটা কোন রকম ওঠে। তারপর বর্তমান বাজারে এক ভাড় গুড়ের দামও কম পাওয়া যায়। যেটা কষ্ট এবং জ্বালানি খরচ হিসেবে তুলনামূলকভাবে কম। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে গুড় বিক্রির চেয়ে রস বিক্রি বেশি লাভজনক এবং সেটির চাহিদাও বেশি। কলারোয়া পৌর সদরের খেঁজুর গাছি শহিদুল ইসলাম শেখ জানান, একভাড় রসের দাম ১শ টাকা। যা গত বছর ছিলো ৭০ টাকা।
তবে হাটের ব্যাপারীরা গুড়ের দাম কম বলে। যে দাম বলে, সে দামে বিক্রয় করলে লাভ তো দূরে থাক, কষ্টের মূল্যও হবে না বলে জানায় কয়েকজন খেঁজুর গাছি। এদিকে, ব্যাপারীরা এ কথা মানতে নারাজ। এমন মন্তব্য সঠিক না দাবি করেন স্থানীয় ও অন্য স্থান থেকে আসা ব্যাপারীরা। তারা বলছেন-গত বারের চেয়ে এ বছর গুড়ের দাম অনেক বেশি। গুড়ের ব্যাপারী হুমায়ুন কবির জানান-এবছর গুড়ের দাম বেশি। গত বছর যে গুড়ের ভাড় ছিলো ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা, এ বছর সেই গুড়ের ভাড় সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ এমনকি ৬শ’ টাকা ক্রয় করতে হচ্ছে। এ গুড়ের হাট থেকে ব্যাপারীরা ভাড় ভর্তি গুড় ক্রয় করে নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে চলে যান এবং প্লাস্টিকের ড্রামে ভর্তি করে বা বিভিন্ন উপায়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে সরবরাহ করে থাকেন। বিশেষ করে দেশের উত্তরের জেলা গুলোর পাশাপাশি বরিশাল, পটুয়াখালী ও অন্যান্য এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় বললেন হুমায়ুন কবির এবং স্থানীয় একাধিক গুড় ব্যবসায়ীরা।
শুধু হুমায়ুন কবির নয়, বরিশাল জেলা থেকে ২/৩ জন ও কলারোয়ার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা একদল গুড়ের ব্যাপারী প্রতিনিয়ত খোরদো বাজারের গুড়ের হাট থেকে পাইকারী দামে গুড় ও পাটালি কিনে অন্যত্র বিক্রিয় করে থাকেন। এদিকে, খোরদো বাজারের খেঁজুর গুড়ের হাট থেকে গুড় কিনে ড্রাম ভর্তি করে গোডাউনে স্টক করেও রাখেন অনেক ব্যবসায়ীরা। পরে শীত মৌসুম চলে গেলে সেই গুড় ও পাটালি চড়া দামে বিক্রয় করেন তারা।  তবে এ পেশার সাথে জড়িতদের আশংকা যেভাবে গ্রাম্য খেঁজুর গাছ নিধন শুরু হয়েছে, সেটা বন্ধ না হলে ঐতিহ্যবাহী সু-স্বাদু এ গুড় ও রসের স্বাদ থেকে বি ত হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)