একাত্তরের এই দিনে: অগ্নিঝরা ১০ মার্চ

১৯৭১ সালে মার্চের প্রতিটি দিনই ছিল বিদ্রোহ-বিক্ষোভে উত্তাল। বিশেষ করে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি সংগ্রামের ডাক দেওয়ার পর বাংলার টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সংগ্রামের অগ্নিগর্ভে পরিণত হয়।

৭১ এর আজকের দিনটি ছিল বুধবার। বঙ্গবন্ধুর ডাকে টানা নবম দিনের মতো দেশজুড়ে চলছিল অসহযোগ আন্দোলন। এর পাশাপাশি জাতির পিতার নির্দেশনা অনুযায়ী, চূড়ান্ত যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো জনতা। ঘরে ঘরে উড়ছিল বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা। আর সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শোভা পাচ্ছিল কালো পতাকা। এমনকি রাজারবাগ পুলিশ লাইন, থানা ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও কালো পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল।

এই দিন সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সাতকোটি বাঙালি আজ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। যে কোন মূল্যে তারা এই অধিকার আদায়ে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। এ পর্যন্ত বাঙালিরা অনেক রক্ত দিয়েছে। এবার আমরা এর অবসান দেখতে চাই।’

অন্যদিকে করাচীতে সাংবাদিকদের ন্যাপ প্রধান ওয়ালী খান জানান, তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য ১৩ মার্চ ঢাকা আসবেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষমতা যেন হস্তান্তর করা যায় সে জন্য আগে আমাদের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের চেষ্টা করতে হবে।

একাত্তরের আজকের দিনে বিকেলে ওয়ালীপন্থী ন্যাপের উদ্যোগে শোষণমুক্ত স্বাধীণবাংলার দাবিতে ঢাকা নিউমার্কেট এলাকায় পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ এতে সভাপতিত্ব করেন। অন্যদিকে ‘লেখক-শিল্পী মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’-এর ব্যানারে লেখক ও শিল্পীরা রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।

বঙ্গবন্ধু এদিন এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলার জনগণকে আমি যে আহ্বান জানিয়েছি, সচিবালয়সহ সরকারি ও আধাসরকারি অফিস আদালত, রেলওয়ে ও বন্দরগুলোতে তা পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর বিবৃতিতে আরো বলেন, ক্ষমতাসীন চক্র প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে বাংলাদেশর জনগণের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে।

১৯৭১ এর মার্চে সারাদেশ যখন আন্দোলন সংগ্রামে উত্তাল তখন প্রবাসী বাঙালীরাও হাত গুটিয়ে বসে ছিল না। আজকের দিনে নিউইয়র্কে প্রবাসী বাঙালি ছাত্ররা জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ দাবি করে তারা সংস্থাটির মহাসচিব উ-থান্টের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন।

৭১’র এইদিনে নারায়ণগঞ্জ জেল থেকে ৪০ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। এ সময় গোলাগুলিতে ১ জন কয়েদি নিহত এবং ২ পুলিশ ও ২৫ কয়েদি আহত হয়। রাজশাহী শহর থেকে কারফিউ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা বিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদেশি সাংবাদিকদের প্রতি  আহ্বান জানান।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)