আশাশুনিতে প্লাস্টিক শিল্পের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্প
সচ্চিদানন্দদেসদয়:
সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্প। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির প্লাস্টিকের কদর বাড়ায় ও প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাবে আশাশুনি উপজেলায় বাঁশ ও বেতের তৈরি কুটির শিল্পের কারিগরদের মাঝে নেমে এসেছে দুর্দিনের ছায়া। কিন্তু কালের বিবর্তনে কারণে ব্যবহারিক জীবনে অতি প্রয়োজনীয় বাঁশ ও বেতের তৈরি কুটির শিল্প আজ হারিয়ে যাচ্ছে। সভ্যতার অগ্রযাত্রায় কুটির শিল্প সামগ্রীর চাহিদা কমতে থাকা, বাঁশ ও বেতের দাম বেড়ে যাওয়া, ঋণের ভার আর দাদনে তাদের কাঁধে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা যায়, বাঁশ ও বেত শিল্পের সঙ্গে জড়িত শত শত পরিবার বর্তমানে চরম দুর্দিনের মধ্যে দিন যাপন করছে। এ অ লের শত শত পরিবার দীর্ঘদিন যাবত বাঁশ ও বেত শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। প্রয়োজনীয় ঋণ, পুঁজি, মজুরি কম থাকার কারণে এসব গ্রাম থেকে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত শত শত শ্রমিক আজ প্রায় বেকারত্ব জীবনযাপন করছে। এসব শ্রমিক বংশানুক্রমে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত।
গ্রামের ঘরে এখন আর এগুলো আগের মত চোখে পড়ে না। অথচ একদিন বাঁশ-বেতের জিনিস ছাড়া গ্রাম কল্পনা করাও কঠিন ছিল। যেখানে বসতি সেখানেই বাঁশ, বেতের তৈরির জিনিস পত্র কিন্তু আজ তা আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য থেকে মুছে যাচ্ছে। এই গ্রাম বাংলার কুটির শিল্প নিয়ে কবি সাহিত্যিক রচনা করেছেন কবিতা গল্প। বাউলরা গেয়েছেন গান। আগে গ্রামের প্রায় বাড়িতেই বাঁশ, বেত দিয়ে তৈরি করা হতো হরেক রকমের সরঞ্জাম। জীবিকা অর্জনের মাধ্যম ও ছিল বাঁশ, বেত।
আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা,শেতপুর, বৈউলা, পুরোহিতপুর, কচুয়া ও দরগাপুর,শ্রীউলা,বড়দল,খাজরা,আনুলিয়া প্রভৃত গ্রামের নারী পুরুষ তাদের নিপুণ হাতে তৈরি কুলা, চাটাই, হাঁস-মুরগির খাঁচা, সাজি, ঢাকনা, চালনি, পালা, খাঁচা, মোড়া বেতের ধামা, পাতিল, চেয়ার, টেবিল, দোলনা, খারাই, পাখা, বই রাখার র্যার্ক, ঘুনি, ডালা, ঝুড়ি ইত্যাদি মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় শিল্পসামগ্রী আশাশুনি উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে পাশ্ববর্তী উপজেলার বাজার গুলোতে বিক্রি করতো।। কুঠির শিল্প কারিগর বিশ^নাথ জানান, পুর্ব পুরুষ থেকে এ পেশায় জড়িত রয়েছেন তারা। আগে এক একটি বাঁশ কিনতে হতো ৫০ থেকে ১২০ টাকা দরে। আর এখন প্রতিটি বাঁশ কিনতে হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। এক সময় গ্রামীণ বাজারে বাঁশের তৈরি পণ্যের বেশ চাহিদা থাকলেও বর্তমানে প্লাস্টিক পণ্যের কারণে এ শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। সেই সাথে বাঁশের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় তারা সমস্যায় ভুগছেন, ছেলে-মেয়ে নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত সহ তাদের চরম দুর্দিন যাচ্ছে এখন।
তারা আরো জানায়, প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং প্লাস্টিক সামগ্রীর অতি ব্যবহারে এখন এই অ লের বাঁশ ও বেত শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। ফলে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা এক প্রকার বাধ্য হয়ে তাদের পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। কারিগরদের দাবী সরকারি পৃষ্ঠ পোষকতা, সহজ শর্তে ঋনের সুবিধা পেলে পুনরায় উজ্জীবিত হবে এ শিল্প । বাঁশ শিল্প কেন্দ্রিক সরকারি বেসরকারি উদ্যেগ গ্রহনে ভাগ্য বদল হতে পারে অত্র উপজেলার কারিগরদের।
Please follow and like us: