কালিগঞ্জে যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে সাপখালি খালে আবার নেটপাটা

অপসারণের ৭২ ঘণ্টা পর না হতেই যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের সাপখালি খালে নতুন করে নেটপাটা দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। অপরদিকে জনস্বার্থে উন্মুক্ত হওয়ার পরও ওই যুবলীগ নেতা , তার পেটুয়া বাহিনীর সদস্যরা সাধারণ মানুষকে ওই খালে মাছ ধরতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ। এদিকে বয়নামা মুলে দাবিদারদের দায়েরকৃত সাপখালি খাল নিয়ে ২০০২ সাল থেকে চলমান মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষের নাজুক ভূমিকার কারণে দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আদালতের রায় বিলম্বিত হচ্ছে। জনগণ তাদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের জিন্নাত আলীসহ কয়েকজন জানান, সুন্দরবনের চুনা নদীর মৌতলার চাতরা সুইজ গেট থেকে সাপখালি খাল প্রবাহিত হয়ে নেঙ্গি, বামনহাট, পারুলগাছা, ফরিদপুর, বেজুয়া, লক্ষীনাথপুর হয়ে যমুনা নদীর সঙ্গে মিশেছে। ওইসব গ্রাম ছাড়াও জিরনগাছা , উত্তরশ্রীপুর, দক্ষিণশ্রীপুর, চাঁচাই, হোগলা, জয়পত্র কাটি, মুকুন্দমধুসুধনপুর, কোমরপুর, শ্রীরামপুরসহ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ৪০টি বিলের বর্ষার পানি সাপখালি খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়। তারা আরো জানান,বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আলম ঢালীর নেতৃত্বে শাজাহান ঢালী, বাদশা, সেকেন্দার ১০/১২ জনের একটি টিম ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে জগবেড়ে থেকে সাপমারা খালের আমিন শেখের দীঘির পাশ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার খাল দখল করে গৌরানা খালের মুখে, বকলমরাররদহসহ পাঁচটি স্থানে খালের উপর আড়াআড়ি নেটপাটা দিয়ে মাছ চাষ শুরু করে। এ ছাড়াও নেঙ্গী থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত কয়েকটি স্থানে কৃষ্ণনগর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান আনছার আলীর পক্ষে গোপালগঞ্জের এক ব্যক্তি বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে নেটপাটা দিয়ে মাছ চাষ করতে থাকেন। বাধা দেওয়ায় এতে বর্ষা মৌসুমে খালে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। জনগণের দাবির মুখে গত ৩১ জুলাই কালিগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর আহম্মেদ মাসুম ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে নেঙ্গীর কিছু অংশ বাদ দিয়ে ফরিদপুর আমিন শেখের ঘের পর্যন্ত নেট পাটা অপসারণ করা হয়। এর তিন দিন পার না হতেই আলম ঢালীর নেতৃত্বে আমিন শেখের ঘেরের পাশে আবারো নেট পাটা বসিয়ে মাছ ধরা শুরু করা হয়। গ্রামবাসী খালে মাছ ধরতে গেলে তাদেরকে হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে কালিগঞ্জ সহকারী ভূমি কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এসএ রেকডীয় মালিক কানাই লালের কাছ থেকে ১৯৬৭ সালের একটি বয়নামা মূলে কৃষ্ণনগরের শেখ আবতাবউদ্দিনের চার ছেলে শহর আলী, সমছের আলী, জবেদ আলী ও আনছার আলী নেঙ্গী মৌজার সাপখালি খালসহ ৪১দশমিক ১১ এরকর জমির মালিকানা দাবি করে আসছেন। ১৯৬৭ সালের ১২ ডিসেম্বর বয়নামা সার্টিফিকেটে খুলনার যে রেজিস্টারের সাক্ষর দেখানো হয়েছে তা তিন পাতায় তিন রকম। এ নিয়ে জনস্বার্থে কালিগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানী ১০০/৯৭ নং মামলা করায় তা খারিজ হয়ে যায়। ২০০২ সালের ১৬ জুলাই এর আদেশে ওই জমি কালিগঞ্জ সহকারী ভূমি কমিশনারকে দখলে নেওয়ার জন্য বলা হয়। এর বিরুদ্ধে আনছার আলী বাদী হয়ে একই আদালতে ছানি কেস করেন যা’র নং ৩৯/২০০২, যা’ চলমান রয়েছে। ২০০৩ সালে ওই জমি থেকে দেড় হাজার টাকা খাস কালেকশান করে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দেওয়া হয়। এদিকে জনস্বার্থে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব এর কাছে মামলা করলে ওই জমি জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করার আদেশ দেওয়া হয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের ২৯ মার্চ বিভাগীয় কমিশনার আদালতে গেলে নিম্ন আদালতের আদেশ বহাল রাখা হয়। তবে আনছার আলী ও তার সহযোগীরা একই আদালতে রিভিউ পিটিশন দাখিল করলে ২০০৪ সালের পহেলা নভেম্বর পূর্বের আদেশ আংশিক সংশোধন করে বলা হয় যে দেওয়ানী মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্বের আদেশ স্থগিত থাকবে। দেওয়ানী আদেশ চুড়্ন্ত বলে গণ্য হবে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ যথাযথ ভূমিকা না রাখায় মামলার দীর্ঘ সুত্রিতার কারণে বয়নামা ব্যবহার করে গোপালগঞ্জের কোন ব্যক্তিকে দিয়ে একটি মহল ওই সরকারি জমি ব্যবহার করে আসছে। সূত্রটি আরো জানান, ১৯৯৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ২০/৯২ নং মামলায় ৯২ ‘ক’ ধারায় ওই জমি পরিত্যক্ত হিসেবে খাস করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব। বর্তমান মাঠ জরিপে ওই জমি ১নং খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত করে খাল ও নদী হিসেবে রেকর্ড দেখানো হয়েছে। যা’ আগামী ঈদের পরপরই প্রিন্ট পড়চা হিসেবে প্রকাশ পাবে। তবে ছানি ৩৯/২০০২ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাতক্ষীরা আদালতের সহকারী জিপি অ্যাড. চিত্তরঞ্জন গাইনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আলম ঢালী সাপখালি খালে নেটপাটা দেওয়া ও জনসাধারণকে মাছ ধরার ব্যাপারে হুমকি ধামকি দেওয়ার কখা অস্বীকার করেন।

জানতে চাইলে কালিগঞ্জ সহকারি ভূমি কমিশনার নুর আহম্মেদ মাসুম জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ি বিএস প্রিন্ট পড়চা না পাওয়া পর্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চলছেন। সে ক্ষেত্রে সাপখালি খালের ইজারাদার গোপালগঞ্জ এলাকার এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে জনসাধারণকে ওই খালে মাছ না ধরার জন্য বলা হয়েছে। তবে ঈদের পরপরই জনসাধারণ সাপখালি খালের সকল সুবিধা ভোগ করতে পারবে। ফরিদপুরে আমিন শেখের ঘেরের পাশে যুবলীগ নেতা হোক আর যেই হোক নেট পাটা বসালে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)