অপরাধীদের আশ্রয়স্থল আশাশুনির বেতনা নদীতে নোঙর করা ‘কার্গো’

আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন স্থানের অপরাধীরা নওয়াপাড়া গ্রামে বেতনা নদীতে পানি সরবরাহের জন্য দাড়িয়ে থাকা কার্গোতে আশ্রয় নিয়ে থাকে। মদ-গাঁজা-ইয়াবা সেবন ও বিক্রয় করার পাশাপাশি চুরি-ডাকাতির পরিকল্পনা করা হয় এখান থেকে। অতিরিক্ত পানি ভরে ট্রাক চলাচল করে আশাশুনি সাতক্ষীরা সড়ক ধ্বংস ও সড়কে দুর্ঘটনা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

নওয়াপাড়া গ্রামে পাশ দিয়ে বেতনা নদী প্রবাহিত। মাঝখান দিয়ে আশাশুনি সাতক্ষীরা সড়ক। ৩টি কার্গো সাগর থেকে লোনা পানি নিয়ে গ্রামের মাঝখানে বেতনা নদীতে নোঙর করে ট্রাকে পানি লোড দিয়ে থাকে। সড়কের পাশে ট্রাক দাড় করিয়ে কনটেইনারে পানি ভরা হয়। একটি ছোট (৫ টন) ও দু’টি বড় ট্যাংক (কমপক্ষে সাড়ে ৭ টন করে) থাকে ট্রাকে। প্রতি ট্রাকে কমপক্ষে ২০/২৫ টন করে পানি ভরা হয়। ট্রাকের ওজন ১২/১৪ টন। ফলে ৩২ টন থেকে ৩৯ টন ওজন নিয়ে ট্রাক চলে থাকে। সড়কটিতে সর্বোচ্চ ২৫ টন ওজন নিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারে। কিন্তু সে নির্দেশ অমান্য করায় সড়কটি নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া ট্রাক থেকে পানি পড়তে পড়তে যাওয়ায় সড়কের ক্ষতির পাশাপাশি পথচারীরা সমস্যায় পড়ে থাকে। ট্রাকগুলো বেশি লোড নেওয়ার কারণে সড়কের মাঝখান দিয়ে চলাচল করা ও অন্য যানবাহনকে পথ না দেওয়ায় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে থাকে। সাতক্ষীরা পৌর সভার মধ্যে দুর্ঘটনার ফলে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাও ঘটিয়েছে এই ট্রাকে। এতকিছুকে ডিঙিয়ে এলাকাবাসীকে হতবাক করে কার্গো ৩টি নিয়ম অমান্য ও অপরাধ তৎপরতা পরিচালনা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী ও কার্গোতে কর্মরতদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, কার্গো এম ভি কয়রা মাষ্টার সেলিম, বরগুনা ও ড্রাইভার আরিফুল, চট্টগ্রামের বাসিন্দা। এমভি রিদুল এর মাষ্টার ফজুল পিরোজপুরের বাসিন্দা এবং এমভি বেলায়েত, মাষ্টার নজরুল, খুলনার বাসিন্দা। এছাড়া কার্গোতে আরও শ্রমিক-কর্মকর্তা রয়েছে। যাদের বাড়ি বিভিন্ন জেলায়। কার্গোতে নিয়মিত যাতয়াত ও গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান করে থাকে এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবনকারীরা। এলাকাবাসীর ধারনা কার্গো থেকে ইয়াবা, ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য লেনদেন ও ক্রয়-বিক্রয় করা হয়ে থাকে। এদের কেউ কেউ চুরি ডাকাতির সাথে জড়িত এবং এরা ডাকাত দলের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে এখানে বসে অপরাধমুলক কর্মকান্ড ও ডাকাতির পরিকল্পনা করে এলাকায় অপরাধ তৎপরতা চালিয়ে আসছে। কার্গোর ড্রাইভার আরিফুল তাদের কার্গোয় দু’মাস আগে কয়েকজন মাদকসেবীকে আর না আসতে বারন দেওয়ার পর আর আসেনা বলে দাবী করেন। মাষ্টার ফজলু তার কার্গোয় তাদের আসতে দেওয়া হয়না বলে দাবী করেন। তবে অন্যরা বলেন, তাদেরকে বারন করলে হুমকীধামকী দেয়, ফলে ভয়ে কিছু বলা থেকে তারা বিরত রয়েছে। তবে নিয়মিত তাদের আনাগোনার কথা এলাকার প্রবীন আ’লীগ নেতা জলিল উদ্দিন ঢালীসহ উপস্থিত অনেকে স্বীকার করেছেন। তাদের দাবী কার্গোয় অপরাধমূলক কর্মকান্ড ও মাদকের সম্প্রসারন করা হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার নওয়াপাড়া গ্রামের বিলে ডাকাতদলের আগমনের খবর পেয়ে গ্রামের শত শত মানুষ লাঠিশোটা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। একপর্যায়ে কার্গোথেকে কয়েকজন নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে নদীর অপর পারে গিয়ে ওঠে। শব্দ শুনতে পেয়ে মানুষ সমবেত হলে কার্গো থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় রওশন, গোবিন্দ ও ডালিম নামে আরও ৩ মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধ জগতের সাথে জড়িতকে গ্রামবাসী আটক করে। কৌশলে গোবিন্দ ও ডালিম পালিয়ে গেলেও রওশনকে পুলিশে দেওয়া হয়। গ্রামবাসীর ধারনা এদের মধ্যে ডাকাত দলের সদস্যরা থাকতে পারে। পুলিশ রওশনকে আদালতে প্রেরন ও পালিয়ে যাওয়া ৩ জনের নামে মামলা করেছেন। রওশনের স্ত্রী তাছলি, গভীরের মেয়ে জানু, হাকিমের পুত্র রুস্তম ও মনোয়ারার পুুত্র মনিরুল রওশনকে ধরিয়ে দেওয়ার কাজে সাহায্যকারীদের হুকমী দিচ্ছে। এমনকি যারা রওশনকে থানায় দিয়েছে জামিনে আসার পর তাদের মজা দেখে নেওয়া হবে বলে আস্ফালন করছে। এলাকাবাসীর দাবী নওয়াপাড়ায় কার্গো ভেড়ানো বন্দ করা হোক। সড়ক দুর্ঘনা রোধ ও সড়ক নষ্ট বন্দ করা হোক। মাদক ক্রয়-বিক্রয়, মাদকের আসর বন্দ ও অপরাধ প্রবনতা দূর করতে নিরাপদ ঘাটি কার্গো হঠানো হোক। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাফ্‌ফারা তাসনীন  ও আশাশুনি থা্নার ভারপ্রাপ্ত কর্র্মকর্তা বিপ্লব কুমার দেবনাথকে অবহিত করা হয়েছে। এব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)