সাতক্ষীরায়  বেপরোয়া ট্রাক্টর/ট্রলি, আতঙ্কিত স্কুলের বাচ্চারা, অতিষ্ট সাধারণ মানুষ!

জাহিদ হোসাইন:
আধুনিক পদ্ধতিতে দ্রুত জমি চাষের মাধ্যম হিসেবে ট্রাক্টর বা কলের লাঙ্গল অতি পরিচিত একটি কৃষিযান। বর্তমানে সেই কৃষিযান এখন সাতক্ষীরার আপামোর জনসাধারণের জীবনে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষির উন্নয়নে এসব ট্রাক্টর আমদানি করা হলেও মালিকরা এগুলো ব্যবহার করছে ভাটার মাটি, ইট, বালু ইত্যাদি মালামাল পরিবহনের কাজে। বেপরোয়াভাবে এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে গ্রাম্য এলাকায়। বেশ কিছুদিন যাবৎ শহরের অভ্যন্তরেও দেখা খাচ্ছে এটি। সনদবিহীন চালকেরা বিশালাকৃতির চাকাওয়ালা ট্রাক্টরগুলো বেপরোয়াভাবে চালাচ্ছে ফলে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা-ঘাট ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে কোন মাথা ব্যাথা নেই সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের। DSC00007
সরেজমিনে কুশখালী, বাবুলিয়া, কলারোয়া পৌরসভা, ঘোনা এমনকি সাতক্ষীরা পৌরসভার অভ্যন্তরে যেয়ে দেখা যায়, ট্রাক্টরগুলো রাস্তায় চলছে দানবের মতো। ট্রাক্টরের বড় বড় চাকার কারনে পিচের কার্পেটিং এর রাস্তাগুলো ধূলোয় পরিণত হয়েছে। ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলে এসকল এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মাঝে মাঝে র্দূর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে পথচারীদের। ট্রাক্টর/কলের লাঙ্গলের বেপরোয়া চলাচলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে স্কুলগামী কোমলমতি ছোট ছোট শিশুরা ও এলাকার মহিলারা।
উত্তর কুশখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোখলেছুর রহমান বলেন, ট্রাক্টর ও ট্রলি চলাচল করায় স্কুলের বাচ্চারা সবসময় আতঙ্কিত থাকে। আমি এ ব্যাপারে সভাপতিকে বলেছি।Untitled-1 copy
কুশখালী গ্রামের গৃহিনী ফতেমা খাতুন এসকল ট্রাক্টর বন্ধের আকুতি জানিয়ে বলেন, চাকাওয়ালা এই গাড়ি চলাচলের কারনে আমরা বাচ্চাদের একা একা ছাড়তে পারি না। আমরা রাস্তায় চালাচল করতে পরছিনা। ভাদড়া হতে কুশখালী বল্ডফিল্ড পর্যন্ত রাস্তা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এগুলো দ্রুত বন্ধের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে মাঝে মাঝে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এটি বন্ধের উদ্যোগ নিলেও এলাকার কিছু লোভী প্রভাবশালী নেতাদের চাপে তারা কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে পারছে না জানিয়ে কুশখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শ্যামল বলেন, আমার ইউনিয়নে বেপরোয়াভাবে ট্রাক্টর/কলের লাঙ্গল চলছে। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা আমার কাছে অভিযোগ দিলে আমি এটি বন্ধ করে দিয়ে আমার ছেলের অসুখের কারনে ঢাকায় যায়। ফিরে এসে দেখি ট্রাক্টর ও ট্রলি আবার চলছে। আমি কারণ জানতে চাইলে ট্রাক্টর/ট্রলির মালিকেরা বলে ভাইস চেয়ারম্যান চালানোর অনুমতি দিয়েছে। আমি ভাইস চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালিকেরা আকুতি মিনতি করায় আমি চালাতে বলেছি এবং চেয়ারম্যানের সাথে কমপ্রমাইস করার কথাও তাদের বলেছি।Untitled-1 copy
রাস্তা নষ্ট হচ্ছে, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ তবে  ফায়দা লুটছে কিছু দুস্কৃতিকারি এমনটাই জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি। তারা বলেন, রাস্তা নষ্ট হলে সরকার ঠিক করবে। রাস্তাতো এগুলো চলাচলের জন্যে। এছাড়া এগুলোতো আর ফ্রি ফ্রি চলছে না। ট্রাক্টর/ট্রলি প্রতি ভাইস চেয়ারম্যানের শ্যালক আজারুল ইসলাম ৫০ টাকা করে নিচ্ছে।
তবে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে আজারুল ইসলাম বলেন, এ ব্যপারে আমি কিছুই জানি না। জাকির, অহিদ, আতিয়ার মাটির ব্যবসা করে খাচ্ছে। তারা এ ব্যাপারে ভালো জানে। আমার বিরুদ্ধে যেটা বলা হচ্ছে সেটা মিথ্যা।
এব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার শফিউল আজম বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। রাস্তায় এ সকল ভারি যানবাহন চলাচলের কোন অনমতি নেই। এব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুই একদিনের মধ্যে প্রত্যেক চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে।
এসকল অবৈধ ট্রাক্টর/ট্রলি এবং তাদের চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়ে সাতক্ষীরা বিআরটি এর সহকারি পরিচালক তানভীর আহম্মেদ বলেন, ট্রাক্টর ও ট্রলি দুটোই অবৈধ। আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলে এগুলোর ব্যাপারে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)