পহেলা বৈশাখে রাজধানীসহ সারাদেশে কড়া নিরাপত্তা

ডেস্ক রিপোর্ট:
পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে থাকছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
রাজধানীর প্রতিটি অনুষ্ঠানই থাকবে ডিএমপির সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায়। সবাই যাতে আনন্দের সঙ্গে এই দিবসটি উদযাপন করতে পারে সেই লক্ষে পুলিশের সবকটি ইউনিট কঠোর অবস্থানে থাকবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপি সূত্র জানায়, সকালে রমনা বটমূল ও মঙ্গল শোভাযাত্রা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, হাতিরঝিল ও রবীন্দ্র সরোবরসহ বিভিন্ন এলাকায় সাদা পোশাকে গোয়েন্দা মোতায়েনসহ ইউনিফর্মধারী পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। কাউকে সন্দেহ হলেই তল্লাশি করা হবে। বিশেষ এলাকাগুলোতে প্রবেশের সময় সবাইকে প্রাথমিক তল্লাশির আওতায় আনা হবে। এজন্য ডিএমপির প্রশিক্ষিত পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ডিএমপি থেকে আরো জানানো হয়, নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবর ও হাতিরঝিল এলাকায় বিভিন্ন সংগঠন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান পালন করবে।
তবে বিকাল ৫টার মধ্যে উন্মুক্তস্থলে সব অনুষ্ঠান বন্ধ করতে হবে। শুধুমাত্র রবীন্দ্র সরোবরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অনুষ্ঠান চলবে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। তবে ইনডোরে অনুষ্ঠান চলতে পারবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পহেলা বৈশাখে কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই। তবু আমরা সব দিক বিবেচনা করেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নিয়েছি। নগরবাসী আনন্দ উদযাপন করবেন আর তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নগরবাসীকে পুলিশকে সহযোগিতা করে চেকিং এর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ডিএমপি সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি সোয়াট টিম, কেনাইন ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই সেখানে যাবেন এসব ইউনিটের সদস্যরা।
এছাড়া অনুষ্ঠানস্থল সিসিটিভির আওতায় আনার পাশাপাশি দিনভর তা মনিটরিংও করা হবে। ভিড়ের মধ্যে নারীদের যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয় সেজন্য সাদা পোশাকে নারী গোয়েন্দা পুলিশও মাঠে থাকবে।
র‌্যাব কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, পয়লা বৈশাখের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও রাজধানীর পাশাপাশি সারাদেশে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা সাদা পোশাকে নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন থাকবেন। প্রস্তুত রাখা হবে র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটও।
মঙ্গল শোভাযাত্রা
পহেলা বৈশাখের সকালে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। প্রতিবছরই এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়। এই শোভাযাত্রাকে ঘিরে থাকবে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শোভাযাত্রা ঘিরে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। মুখোশ পরা এবং বিজ্ঞাপনি স্টিকার বহন করে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করা যাবে না। মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে চারুকলার স্বেচ্ছাসেবক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে।
রমনা বটমূল
রমনা বটমূলে প্রবেশ ও বের হওয়ার ৮টি গেটে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি প্রবেশ গেটেই থাকবে আর্চওয়ে এবং পুলিশের মেটাল ডিটেক্টর। তল্লাশির মধ্য দিয়ে সবাইকে পার্কের ভেতরে যেতে হবে। বটমূলের পাশে থাকা পুকুরে তল্লাশির জন্য থাকবে নৌপুলিশের টহল টিম। এছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট প্রস্তুত থাকবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, বৈশাখের অনুষ্ঠানস্থলে এবার থাকছে পুলিশের ইভাকুয়েশন প্ল্যান। যে কোনো ধরনের সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই প্ল্যান কাজ করবে। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে প্রস্তুত থাকবে অ্যাম্বুলেন্স। এছাড়া পুলিশ ও র‌্যাবের কন্ট্রোল রুম সার্বক্ষণিক খোলা রাখা হবে।
নিরাপত্তার স্বার্থে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানস্থলে হ্যান্ডব্যাগ, ট্রলি ব্যাগ, বড় ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তবুও যদি কেউ সঙ্গে ব্যাগ নিয়ে যান তাহলে তাকে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
নিরাপত্তাবলয়ে ভেতরে বাহিনীর পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়াও পুরো এলাকায় একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে।
সূত্রটি আরো জানায়, সব অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য। থাকবে ওয়াচ টাওয়ার, টহল ডিউটি, ফুট পেট্রলিং, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেন্টার, পুলিশের সাব-কন্ট্রোল রুম, পুলিশ ব্লাড ব্যাংক ও প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র, ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং, সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ফায়ার টেন্ডার, অ্যাম্বুলেন্স, নৌপুলিশের ডুবুরি দল ও সমগ্র এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরা আওতায় আনা ইত্যাদি।
৮টি পয়েন্টে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থাপনা:
যারা গাড়ি নিয়ে অনুষ্ঠনস্থলে আসবেন, তাদের গাড়ি ডিএমপি নির্ধারিত স্থানে রাখতে হবে। এগুলো হলো, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল রোড (উত্তর দিক থেকে আগত), পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড (উত্তর দিক থেকে আগত), আব্দুল গণি রোড (পূর্ব-দক্ষিণ দিকের গাড়ি), কার্জন হল থেকে বঙ্গবাজার হয়ে ফুলবাড়িয়া (দক্ষিণ দিকের গাড়ি), মৎস্য ভবন থেকে কার্পেট গলি (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি), শিল্পকলা একাডেমি গলি (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি),সুগন্ধা থেকে অফিসার্স ক্লাব (ভিআইপি ও মিডিয়ার গাড়ি), কাঁটাবন থেকে নীলক্ষেত হয়ে পলাশী পর্যন্ত (দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের গাড়ি)।
অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক ৭ সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে:
বাংলা মটর-রূপসী বাংলা-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর, রূপসী বাংলা-কাকরাইল-মৎস্য ভবন-কদম ফোয়ারা, মৎস্য ভবন-শাহবাগ-কাঁটাবন, পলাশী-শহীদ মিনার-দোয়েল চত্বর-হাইকোর্ট ক্রসিং, বকশী বাজার-শহীদ মিনার-টিএসসি, শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং-দোয়েল চত্বর, নীলক্ষেত-টিএসসি।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)