আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় থাকছে না সশস্ত্র বাহিনী

ডেস্ক রিপোর্ট:
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী অন্তর্ভুক্ত করাসহ রাজনৈতিক দলের বড় বড় সুপারিশ বাদ দিয়ে খসড়া প্রকাশ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ নির্বাচন পরিচালনা আইন (আরপিও) সংশোধনে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে আইন সংস্কারের জন্য চার শতাধিক সুপারিশ আসে। তবে সংশোধনে তেমন কোনো বড় পরিবর্তন আনবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির আইন সংস্কার কমিটির ৩৫টি সুপারিশ থেকে বাছাই করে ২০ সুপারিশের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ইসির বৈঠক শেষে তা প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
ইসি সচিব হেলালউদ্দিন আহমদ জানান, কমিশন বৈঠকে খসড়ার জন্য ২০টি সুপারিশ বাছাই করা হয়েছে। কিছু সুপারিশের বিষয়ে কমিশন একমত না হওয়ায় এই বৈঠক হবে। বৈঠক শেষে সব ঠিক থাকলে আইনের খসড়া প্রকাশ করবে ইসি।
আইন সংস্কার কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, দুটি বিষয় ছাড়া আরপিও সংশোধনের খসড়া মোটামুটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিষয় দুটি হচ্ছে আগাম ভোটিং ও নির্বাচনী তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা। এ দুটি বিষয়ে নতুন কিছু করা যায় কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। কারণ নবম সংসদ নির্বাচনের পর আরপিও সংশোধনীর সময় এটি বাদ দেয়া হয়েছিল। নির্বাচনের সময় চাইলে আমরা অন্য আইনে সেনা মোতায়েন করতে পারব।
জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো পোলিং এজেন্টদের নির্দিষ্ট ফরমে স্বাক্ষরের বিধান চালু হচ্ছে। পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে উপস্থিতি, ভোটকক্ষ থেকে বের হওয়া ও ফিরে আসার পর এ ফরমে স্বাক্ষর করতে হবে। ফলে ভোট গ্রহণকালে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এসে পোলিং এজেন্টদের অভিযোগ আর শুনতে হবে না।
খসড়া তালিকায় ২০টি আইন সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ (৫) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো জেলায় দুজন রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা যেতে পারে। ৭ (৬) ধারায় বলা হয়, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রত্যাহারের পাশাপাশি বদলি করা যাবে। ৮ (২) ধারায় বলা হয়েছে, ২৫ দিন আগের স্থলে ভোটের ১৫ দিন আগে কেন্দ্রের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে।
৯ (১) ধারায় বলা হয়, তিন দিন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল উন্মুক্ত রাখতে হবে। ১২ (১) (সি) ধারায় বলা হয়, ঋণখেলাপিদের জটিলতা কমাতে মনোনয়ন দাখিলের সাত দিন আগের পরিবর্তে দাখিলের আগের দিন তা পরিশোধের সুযোগ দেওয়া। ১২ (৩) ধারায় বলা হয়, অনলাইনে মনোনয়ন দাখিলের বিধান যুক্ত করা। ১২ (৩এ) (এ) ধারায় বলা হয়, স্বতন্ত্র প্রার্থিতার সুবিধার্থে নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ১%-এর পরিবর্তে এক হাজার ভোটার সমর্থন তালিকা জমার বিধান করতে হবে। ১২ (৩এ) (সি) ধারায় বলা হয়, প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ১২ ডিজিটের টিআইএন সনদ দাখিল বাধ্যতামূলক করতে হবে।
১৩ (১) (এ) ধারায় বলা হয়, জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা যেতে পারে। ১৬ (১) ও ১৯ (১) ধারায় বলা হয়, বিদ্যমান বিধানকে সহজ করতে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর একক প্রার্থী হলে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা, সহজীকরণ করতে হবে। ২০ (এ) ধারায় বলা হয়, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে ইভিএম ব্যবহারের জন্য নতুন বিধান সংশোধন করতে হবে। ২২ (১) ধারায় বলা হয়, প্রার্থীদের সুবিধার্থে নির্ধারিত ফরমে পোলিং এজেন্ট নিয়োগে সংশোধনী আনতে হবে।
২২ (৩) ধারায় বলা হয়, পোলিং এজেন্টকে প্রার্থীর প্রতীক সংবলিত কার্ড না দিয়ে ইসির পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। ৩১ (১) ধারায় বলা হয়, ইভিএমে ভোট নিতে হলে এ অনুচ্ছেদেও সংশোধন আনতে হবে। ৩৯ (১) ও ৩৯ (২) ধারায় বলা হয়, এতে আরও দুটি অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনতে হবে। ৪৪ বি (৬) ধারায় বলা হয়, নির্বাচনী ব্যয় সীমাবদ্ধ রাখা ও অবৈধ প্রভাব রোধে মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। ৪৪ সি (৫) ধারায় বলা হয়, সময়ের বাস্তবতায় নির্বাচনী ব্যয় যথাসময়ে দিতে ব্যর্থ হলে ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা।
৪৪ ই (২) ধারায় বলা হয়, সুষ্ঠু নির্বাচনে ব্যর্থ হলে সরাসরি বদলি করার বিধান করে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সংশোধন করতে হবে। ৯১ সি (৮) ধারায় বলা হয়, ভোটে কর্মকর্তাদের অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব, দল বা প্রার্থীর অনিয়ম, আচরণবিধি লঙ্ঘনে খোঁজ নিয়ে তৃতীয় চোখ নিয়োগ করা যেতে পারে। ৯১ (এ) এ ধারায় বলা হয়, নির্বাচনী অভিযোগ দাখিল ও নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে বিভিন্ন দেশে। অভিযোগ কেন্দ্র স্থাপনের বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)